বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আইন মন্ত্রণালয় বদলে দিচ্ছেন আনিসুল হক

নিজামুল হক বিপুল

আইন মন্ত্রণালয় বদলে দিচ্ছেন আনিসুল হক

আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদে চেহারা পাল্টে গেছে আইন মন্ত্রণালয়ের। নানা উন্নয়নমূলক সংস্কার কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের দুর্নামও ঘুচিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে সাবরেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রার, জজ, সাব-জজ বদলির ক্ষেত্রে এখন আর কোনো দুর্নীতি অনিয়মের সুযোগ নেই। আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এসব কর্মকর্তার বদলির ক্ষেত্রে লটারি প্রথা চালু করেছেন। এর ফলে আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম বা দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে। আর এতে গত তিন-সাড়ে তিন বছরে দুর্নীতির দুর্নাম ঘোচাতে পেরেছে আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগে আইজেআর-এর দফতর থেকে সাবরেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার বদলির তালিকা করা হতো। সেই তালিকা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেওয়া হতো। এক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বরাবরই। কিন্তু আইনমন্ত্রী হিসেবে আনিসুল হক দায়িত্ব নেওয়ার পর বদলির এই প্রক্রিয়া সরাসরি মন্ত্রণালয়ের হাতে নিয়ে আসেন এবং নিজে তদারকি করে কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়টি চূড়ান্ত করেন।

গত প্রায় সাড়ে তিন বছরে সাবরেজিস্ট্রার ও রেজিস্ট্রার পদে যেসব বদলি হয়েছে তার প্রতিটি করা হয়েছে লটারির মাধ্যমে। এসব ক্ষেত্রে কোনো রকম তদবির প্রাধান্য পায়নি। যার ফলে সাবরেজিস্ট্রার বা জেলা রেজিস্ট্রারকে নিজেদের বদলির জন্য ঢাকায় দৌড়ঝাঁপও করতে হয়নি। এ ছাড়াও বর্তমান মেয়াদে আইন মন্ত্রণালয় অনেক সংস্কার কাজেও হাত দিয়েছে। বিশেষ করে সরকারি প্রকিউরমেন্ট বিধামালাকে সর্বশেষ গত বছর সংশোধন করা হয়েছে। প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট এবং প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুসারে ক্রয় কার্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অসঙ্গতি এবং অনৈতিক চর্চা বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট এবং প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুসারে ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা যায় কিনা সে চিন্তাভাবনা চলছে। সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে ই-প্রকিউরমেন্ট চালুর জন্য মন্ত্রিপরিষদ ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। চলতি সপ্তম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৮ সালের মধ্যেই সব সরকারি ক্রয় কার্য ই-প্রকিউরমেন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ও বিধিমালা জানাতে এবং ই-প্রকিউরমেন্ট পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে ই-প্রকিউরমেন্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে করে বিচারকরা সরকারি প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত অনেক মামলা সহজে নিষ্পত্তি করতে সহায়তা পাবেন। আইন মন্ত্রণালয় আরও বেশ কিছু সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইন ও বিচার বিভাগের আওতায় ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলো হলো বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (১ম পর্যায়) ২য় সংশোধিত প্রকল্প, ২৮টি জেলায় আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ জেলা জজ আদালত ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প, সরকারি আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান, অধঃস্তন আদালত ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে আইন ও বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জাস্টিস রিফর্ম অ্যান্ড করাপশন প্রিভেনশন প্রকল্প এবং জাস্টিস সেক্টর ফ্যাসিলিটিস প্রকল্প। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪২টি সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১২টির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ ১২টির মধ্যে টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, জামালপুর, জয়পুরহাট, সিলেট এবং কুড়িগ্রাম— এ ৬টি উদ্বোধন হয়েছে। আগামী জানুয়ারি ২০১৭-এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং মানিকগঞ্জ জেলার সিজেএম আদালত ভবন উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। আগামী জুন ২০১৮-এর মধ্যে সবগুলোর নির্মাণ সম্পন্ন হবে। দ্বিতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ২৭টি জেলায় জেলা জজ আদালত ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি জেলার সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ১৪টি জেলার জজ আদালত ভবনের কাজ ৮৫-৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন ২০১৭-এর মধ্যে সবগুলোর সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হবে। বিচার কার্যক্রমকে দ্রুত সম্পন্ন ও সঠিক করার লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য জাতিসংঘের উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা ইউএনডিপি এবং যুক্তরাজ্য সরকারের সংস্থা ডিএফআইডির সহায়তায় ‘জাস্টিস সেক্টর ফ্যাসিলিটিস’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। জাস্টিস সেক্টর রিফর্ম এবং দুর্নীতি দমনে কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তায় জাস্টিস রিফর্ম অ্যান্ড করাপশন প্রিভেনশন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে সরকারি আইনি পরামর্শ সেবা এবং স্বচ্ছ এবং দ্রুততার সঙ্গে আইনি সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ‘সরকারি আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান’ প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (এনএলএএসও) ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে এবং গত বছরের এপ্রিলে ন্যাশনাল হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ হেল্প লাইনের মাধ্যমে ৮ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আইনি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সুষ্ঠু, দ্রুততা এবং দক্ষতার সঙ্গে বিচারকার্য এবং বিচার ব্যবস্থাপনা পরিচালনাকে লক্ষ্য করে অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অধঃস্তন আদালত ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে আইন ও বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯ সালে জুনের মধ্যে ৫৪০ জন বিচারককে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হবে। এ জন্য সরকারের ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। জেলা রেজিস্ট্রি অফিস এবং সাবরেজিস্ট্রি অফিস-সমূহকে ভৌত অবকাঠামো সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ‘দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলা রেজিস্ট্রি ও সাবরেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৪৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের আওতায় ১৩ জেলা রেজিস্ট্রি অফিস এবং ৯৮টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া দেশে চৌকি আদালতগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে বিচারকদের আবাসনের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর