সোমবার, ৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

মার্কিন সিনেটে ইউনূস-হিলারি তদন্ত নিয়ে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্কিন সিনেটে দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তদন্ত নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি দুই দিন ধরে ঢাকায় এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তদন্তে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত আটকাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও পররাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারি চ্যানেল ব্যবহার করেছিলেন কি না, তা জানতে  চেয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ-সংক্রান্ত সিনেট কমিটি। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে দেওয়া এক চিঠিতে এ বিষয়ে জানতে চান কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্র্যাসলি। চিঠিতে বলা হয়, এ অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে এর মাধ্যমে হিলারি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন এবং পররাষ্ট্র বিভাগের সততা নিয়ে জনগণের আস্থা বিনষ্ট করেছেন। বৃহস্পতিবার চাক গ্র্যাসলির নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ খবর প্রকাশ করা হয়। এতে  রেক্স টিলারসনকে  লেখা সিনেট কমিটির চেয়ারম্যানের চিঠিটির মূল কপিটির পিডিএফ  ভার্সনের একটি লিঙ্কও দেওয়া হয়। চিঠিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র মিশনের সাবেক উপপ্রধান জন ডানিলোভিচকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলেও জানানো হয়। চিঠির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব চাওয়ার হুমকি দেওয়া-সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়। চাক গ্র্যাসলির ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়, ‘বাংলাদেশি বিজনেসম্যান, যিনি ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের একজন  ডোনার, তাকে সহায়তা করতে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও তার কর্মকর্তারা অফিশিয়াল চ্যানেল ব্যবহার করেছিলেন কি না, এ-সংক্রান্ত তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে  চেয়েছেন চাক গ্র্যাসলি। অভিযোগগুলোর মধ্যে এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে আর্থিক হিসাব নিয়ে তদন্তের জন্য হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। হুমকি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে বলা হয়েছিল, তিনি (জয়) যদি বিজনেসম্যান ও ক্লিনটন অর্গানাইজেশনের ডোনার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের তদন্ত বন্ধ করতে সহায়তা না করেন, তাহলে তার আইআরএস নিরীক্ষা করা হবে।’ রেক্স টিলারসনকে লেখা চিঠিতে আরও বলা হয়, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে এমন যুক্তিসংগত সন্দেহ উত্থাপিত হয়েছে যে, তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন এবং পররাষ্ট্র বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট করেছেন। গ্র্যাসলি বলেন, কিছু ই-মেইল এটা প্রমাণ করছে যে পররাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তারা এবং হিলারি ক্লিনটন ও তার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণের কার্যক্রমটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এ ছাড়া ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকেও বলা হয়েছিল, তিনি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে চাপ দেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকেও তদন্ত বন্ধ করতে একাধিকবার চাপ দিয়েছিল পররাষ্ট্র বিভাগ। চাক গ্র্যাসলি চিঠিতে আরও বলেন, যদি শুধু ব্যক্তিগত ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের আর্থিক স্বার্থের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার পদ ব্যবহার করে একটি সার্বভৌম সরকারের নিরপেক্ষ তদন্ত বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ করেন, তা হবে অগ্রহণযোগ্য। আর সরকারি ক্ষমতা ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠান মিলেমিশে যদি এ কাজ করে থাকে, তাহলে  সেটাও অনুচিত হবে। আর তদন্ত আটকাতে প্রধানমন্ত্রীর  ছেলের (জয়) বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব নেওয়ার হুমকি  দেওয়ার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র দফতরের  কোনো ভূমিকা ছিল কি না, তা নির্ধারণ করা জরুরি। গ্র্যাসলি চিঠিতে এ অভিযোগের বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পররাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত কি না এবং আইআরএস নিরীক্ষার হুমকি সত্য কি না তা বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া অভিযোগগুলো পর্যালোচনার জন্য এ-সংক্রান্ত ফাইল ও ই-মেইলগুলো পররাষ্ট্র বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল অথবা বিচার বিভাগে পাঠানো হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছেন।

সর্বশেষ খবর