বুধবার, ৭ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাংক আমানতে শুল্কারোপে সংসদে সমালোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা কঠোর সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন, আগে ব্যাংকে সুদের থেকে শুল্ক কাটা হতো, এবারের বাজেটে জনগণের গচ্ছিত আসল টাকাতেই হাত দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের শুধু ইমেজই ক্ষুণ্ন হয়নি, ভোট ব্যাংকেও আঘাত হানবে। জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এটি নতুন কর নয়। বহু বছর ধরেই মানুষ এই কর দিয়ে যাচ্ছে। এবারের বাজেটে আমি শুধু করের হার একটু বাড়িয়েছি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে গতকাল বাজেট অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আবদুল ওয়াহাব, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম ও নুরুল ইসলাম ওমর। আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অনেকে বলেছেন, আমি নাকি জাতীয় পার্টির মন্ত্রী হিসেবে সংসদে প্রথম বাজেট দিয়েছি। বাস্তবে এটি ঠিক নয়। আমি কখনো জাতীয় পার্টি করিনি, জাতীয় পার্টির সদস্য বা মন্ত্রীও ছিলাম না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হন, তখন ওই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করি।

সঞ্চয়পত্র প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্রে যে সুদের হার রয়েছে, তা কিছুটা কমানো হবে। তবে বাজারে যে সুদের হার রয়েছে তার চেয়ে দুই ভাগ বেশি হবে। রেমিট্যান্স কমার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক প্রবাসীই বিদেশে স্থায়ী হচ্ছেন, সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ রাখছেন। বেসরকারি সূত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ৮৪ বছরের অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে অত্যন্ত ভালো বাজেট দিয়েছি উল্লেখ করে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সম্পূরক বাজেটে যে দাবিগুলো আনা হয়েছে, তা জনগণের কল্যাণেই ব্যয় করা হয়েছে। আমি আশা করি, খুশি মনে সংসদ সদস্যরা সম্পূরক বাজেট পাস করে দেবেন।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, একজন সিনিয়র মন্ত্রী সংসদে বলেছেন সমুদ্র কি নৌকা দিয়ে পার হওয়া যায়? আমিও তাই বলি, যায় না। গত তিন তিনবার আমরা লাঙ্গল দিয়ে আপনাদের (আওয়ামী লীগ) সাহায্য করেছি। আরও চাইলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এডিবি বাস্তবায়নের ৭০ শতাংশ বাকি আছে। এটা কী বাকি তিন মাসে বাস্তবায়ন সম্ভব? ব্যাংক গ্রাহকদের আমানতের ওপর আবগারি ট্যাক্স আরোপে জনগণ আতঙ্কিত। তবে কী মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে বালিশের নিচে, মাটির নিচে রাখবে? মেগা প্রকল্প নিয়ে সরকার মেগাজটে পড়েছে। দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। অর্থনীতি ভয়াবহ অবস্থায় আছে।

সরকারি দলের সোহরাব উদ্দিন অনাদায়ী ট্যাক্স আদায়ে ট্যাক্সেস আপিল ট্রাইব্যুনালকে আরও সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাহলে বাজেটের বড় একটি অংশ এখান থেকে আসতে পারে। ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপের বিষয়ে তিনি বলেন, এর সঙ্গে প্রান্তিক মানুষ জড়িত। আমি মনে করি না প্রধানমন্ত্রী এতে সমর্থন দেবেন।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকা যেনতেনভাবে খরচ করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী দেশের সব মানুষকে পুতুল মনে করেন। যেন জনগণ বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। এক লাখ কোটি টাকা বিদেশে ইতিমধ্যে পাচার হয়ে গেছে। অনেক মন্ত্রী ৯ মাস পর্যন্ত বিদেশে থাকেন, কিন্তু কী অর্জন করে নিয়ে আসেন কেউ জানে না। ব্যাংকে আবগারি শুল্ক আরোপের নামে বর্তমান সরকারের ভোট বিপুল পরিমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষমতার কালো চশমা পড়ে তারা তা দেখছে না। তিনি বলেন, সরকার আস্তিক-নাস্তিক, বামপন্থি-চরমপন্থি সবাইকে এক নৌকায় উঠানোর কারণে নৌকা এখন ডুবুডুবু।

জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক আরোপের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ব্যাংকে টাকা রাখা নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর