শুক্রবার, ৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
বরকতময় মাহে রমজান

যে কারণে সাহরি খাই

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

‘রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাতে আহার করার নাম সাহরি।’ ‘সাহরি’ খাওয়া সুন্নত এবং শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের জন্য তা আল্লাহতায়ালার বিরাট   অনুদানবিশেষ। আগের নবীদের উম্মতদের জন্য সাহরি খাওয়ার বিধান ছিল না। প্রথম দিকে আমাদের ওপরও হুকুম ছিল, ‘রোজা রেখে রাতের বেলা একবার ঘুমিয়ে পড়লে পরে জাগ্রত হয়ে আর পানাহার বা স্ত্রীর কাছে যেতে পারবে না।’ পরে আল্লাহ যখন দেখলেন এ বিধান প্রিয় নবীর উম্মতের জন্য খুবই কষ্টকর, দেখা গেল সাহাবায়ে কিরামের কেউ কেউ রোজার উপবাস-ক্লান্ত শরীর নিয়ে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়েছেন। হঠাৎ তন্দ্রার মধ্যে মানবীয় দুর্বলতায় আপন স্ত্রীদের সাহচর্যে লিপ্ত হয়েছেন। পরদিন নবীর দরবারে এসে অনুতপ্ত কণ্ঠে এই গোপন বিচ্যুতির কথা অকপটে ব্যক্ত করেছেন, ক্ষমালাভের প্রত্যাশায় তখন দয়াময় আল্লাহ সাহাবাদের এই অপারগতাকে ক্ষমা করে দেন। এমনকি তার অপার অনুগ্রহ-অনুদানের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়ে সাহরি খাওয়ার অনুমতি দেন। (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন, সূরা বাকারা, ১৮৭ নম্বর আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গ)। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস কর এবং যা কিছু আল্লাহ তোমাদের জন্য দান করেছেন, তা আহার কর। আর খানাপিনা কর, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর পরদিন সন্ধ্যা নাগাদ রোজা সম্পূর্ণ কর।’ (সূরা বাকারা : ১৮৭)। এভাবে রোজার দিনে রাতের ভাগটা সম্পূর্ণ খোলা হয়ে যায় আমাদের জন্য এবং রোজার প্রস্তুতিতে রাতের শেষ ভাগে ‘সাহরি’ খাওয়ার সুন্দর সুন্নত নিয়ম প্রবর্তিত হয়। হাদিসে এই সাহরিকে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করে এরশাদ হয়েছে, ‘আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব (ইহুদি-খ্রিস্টানদের) অনুসারীদের রোজার মধ্যে (অন্যতম) পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া।’ (মুসলিম, মিশকাত)। বস্তুত সাহরি আমাদের জন্য আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ ও অনুদান এবং রসুল (সা.)-এর সুন্দরতম সুন্নত। এর মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের সামগ্রিক জীবনের জন্য বৃহত্তম কল্যাণ, বরকত ও প্রাচুর্য। বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত মিশে রয়েছে।’ (মিশকাত)। অন্য এক হাদিসে হজরত এরবাজ বিন সারিয়া (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা মাহে রমজানে রসুল (সা.) আমাকে ‘সাহরি’ খাওয়ার দাওয়াত দিলেন এবং তিনি এই বলে ডাকলেন, ‘তুমি বরকতপূর্ণ আহারের জন্য এসো।’ (আবু দাউদ, নাসায়ি)। হে আল্লাহ! নবী (সা.)-এর সাহরির মতো আমাদের সাহরি খাওয়াকে বরকতময় করে দিন। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর