বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেফতার, মার্কিন রাষ্ট্রদূত তলব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেফতার, মার্কিন রাষ্ট্রদূত তলব

বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া গৃহকর্মীর মামলায় নিউইয়র্কে গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশি কূটনীতিক শাহেদুল ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশের  ডেপুটি কনসাল জেনারেল পদে কর্মরত শাহেদুল ইসলামকে তার বাসা থেকে সোমবার সকালে স্থানীয় পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তাকে কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে হাজির করা হলে আদালত জামিনের আদেশ দেয়। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। গত বছর কূটনীতিক শাহেদুলের বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ আমিন নামের ওই গৃহকর্মী সম্প্রতি আদালতে মামলা করেন। শ্রমিক পাচার, নির্যাতন এবং মজুরি চাওয়ায় হত্যার হুমকিসহ ৩৩ ধরনের ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে বাংলাদেশি এ কূটনীতিকের বিরুদ্ধে। তবে পলাতক ব্যক্তির মামলায় কর্তব্যরত কূটনীতিককে গ্রেফতারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঢাকার ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তীব্র অসন্তোষের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। ওই গৃহকর্মী যে পালিয়ে গেছেন তা গত বছরই নিয়মানুসারে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে জানিয়েছিল নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট। গ্রেফতারের ব্যাখ্যা চাইতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে যাবেন ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকরা। এর আগে একই ধরনের অভিযোগে ২০১৪ সালের নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ওই মামলার নোটিস দেওয়ার পর্যায়েই নিউইর্য়ক ছাড়েন মনিরুল ইসলাম। সেই মামলাটি এখনো ঝুলে আছে। মনিরুলের বিরুদ্ধে মামলা করা গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ ইতিমধ্যেই স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার জন্য গ্রিন কার্ড পেয়েছে। এ কারণে এবারের মামলাটিও গৃহকর্মী আমিনের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ঢাকার পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের বড় একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার জন্য গৃহকর্মীরা এ ধরনের মামলা করে থাকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর, কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন এক বিবৃতিতে বলেছেন, সীমিত কূটনৈতিক দায়মুক্তিসহ কনস্যুলার অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত শাহেদুলের বিরুদ্ধে এক বিদেশিকে এনে তার কুইন্সের বাসায় ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত বিনা মজুরিতে জোরপূর্বক কাজ করানো ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১২ সালের শেষ দিকে শাহেদুল বাংলাদেশ থেকে মোহাম্মদ আমিন নামে একজনকে গৃহকর্মী হিসেবে নিউইয়র্কে এনে তার পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করেন। তাকে দিয়ে  দৈনিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করালেও বিনিময়ে ‘একটি পয়সাও’ দেওয়া হয়নি। মজুরি দাবি করলেই আমিনকে মারধর করা হতো। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে আমিনকে হত্যার হুমকি, এমনকি বাংলাদেশে তার বৃদ্ধা মা এবং ছেলে-মেয়েকেও হত্যার হুমকি দেন। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে গত বছরের মে মাসে আমিন পালিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিচার চান। সোমবার সকালে নিউইয়র্কের পুলিশ শাহেদুলকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টা পর কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে হাজির করা হয়। বিচারক ড্যানিয়েল লুইস ৫০ হাজার ডলারের বন্ড বা নগদ ২৫ হাজার ডলারে তার জামিন ঠিক করে দেন এবং তার পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও প্রায় চার বছরের ওভারটাইমসহ বেতন ও যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করতে হবে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান জানান, গৃহকর্মী আমিন গত বছর শাহেদুলের বাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করেছি। গৃহকর্মী নিয়োগ থেকে পারিশ্রমিক-ভাতা ও ভ্রমণ ভাতার সবকিছুই ডেপুটি কনসাল জেনারেলের ব্যক্তিগতভাবে করার কথা। তাই বেতন একেবারেই পাননি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটি সত্য না মিথ্যা তা আমি বলতে পারব না। এটা নিতান্তই শাহেদুলের ব্যাপার। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাহেদুলের পাশে থাকবেন বলে উল্লেখ করে কনসাল জেনারেল জানান, ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার ডলারের বন্ড সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেও শাহেদুল ইসলামের মুক্তির আনুষ্ঠানিকতায় কিছু বাড়তি সময় লাগছে। আর মুক্তির পর আগামী ২৮ জুন পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করায় সেদিন শাহেদুলকে আবার আদালতে হাজির হতে হবে। জানা যায়, সাহেদুল ইসলাম রাজনৈতিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োগপ্রাপ্ত কূটনীতিক। ২০১১ সালে নিউইয়র্ক মিশনে কাউন্সিলর পদে যোগ দেন তিনি।

ঢাকার তীব্র অসন্তোষ : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কূটনীতিক আটকের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল গ্রেফতারের খবর জানার পরপরই এ ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের অনুপস্থিতিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলর আন্দ্রেয়া বি রডরিগেজ গতকাল ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে দেখা করেন। তাকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তীব্র অসন্তোষের কথা।

যোগাযোগ করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন পলাতক ব্যক্তির কথায় একজন কূটনীতিককে কেন আটক করা হয়েছে সেটি জানার জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে কারণ জানতে চেয়েছি। গোটা ব্যাপারটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয় এবং তাদের কাছে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছি আমরা। ১৩ মাস আগে এই গৃহকর্মী সাহেদুল ইসলামের বাসা থেকে পালিয়ে যান এবং সেই সময়ে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এর এক বছর পর একজন পলাতক ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একজন কূটনীতিককে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি তাদের কাছে।

ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কূটনীতিকরা দেখা করে বিষয়টির ব্যাখ্যা চাইবেন বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গৃহকর্মীর পলাতক থাকার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানানোর পরেও এ ঘটনা কেন ঘটল, সেটি একটি রহস্য এবং আমরা এটি জানতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রকে এর ব্যাখ্যা অবশ্যই বাংলাদেশকে দিতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর