শিরোনাম
বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভ্যাট শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাট শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত

বাজেটে ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করাসহ ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি অব্যাহত রেখেছে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংকে টাকা রাখা ও বিমানের টিকিট কাটার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ মানুষ এই  বাজেটে খুশি হতে পারেনি। আবগারি শুল্ক আর ১৫ ভাগ হারে ভ্যাট বাড়ানোর ইস্যুতে চাপা পড়ে গেছে বাজেটের আরও অনেক দিক। অতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে অনেক কোম্পানি ও কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বোবা-কালা নন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।’ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা এসব কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং প্যানেল চেয়ারম্যান শামসুল হক টুকু। আলোচনায় অংশ নেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সরকারি দলের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শামসুল হক টুকু, নজরুল ইসলাম বাবু, বেগম সফুরা বেগম ও শামসুল হক চৌধুরী এবং বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হলো স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। তবে এদের মোকাবিলা করেই অতীতের সাতটি বাজেটের মতো এ বাজেটও সফলভাবে বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। সদ্য সরকারি দলে যোগ দেওয়া স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সংসদে এবং সংসদের বাইরে যখন বাজেট নিয়ে আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আবগারি শুল্ক, তখন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবার আবগারি শুল্কের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে ভ্যাট আইন কার্যকর করার বুদ্ধি ভোটের রাজনীতির সঙ্গে কি সাংঘর্ষিক নয়? এটি তো ১৯৮১-৮২ সালে মুহিত সাহেবের প্রণীত সেনাপ্রধানের বাজেট নয়, যে মনে চাইল আর প্রস্তাব করে দিলাম, আর সেনাপ্রধান সাহেবও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এককভাবে পাস করে ফেললেন। এটি একটি রাজনৈতিক সরকারের বাজেট, যাকে দেড় বছর পর আবার জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেট চাইতে হবে।’ বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম বলেন, এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। তাই আবগারি শুল্ক নিয়ে দেশে প্যানিক তৈরি হয়েছে। যদি আগেরটাও তিনি বজায় রাখেন, তাহলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর দাবি করে তিনি বলেন, ‘জনগণের সঞ্চয়ের ওপরও অর্থমন্ত্রীর নজর পড়েছে। এর ওপর যেন ওনার কাঁচি না পড়ে। সুদহার না কমানোই এ ক্ষেত্রে ভালো।’ দুর্নীতি-সহায়ক, অবিবেচক এবং অতিরিক্ত কর আরোপের পথ থেকে অর্থমন্ত্রীকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় পার্টির এই এমপি বলেন, ‘বাজেটের আয় অনেকটা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ওপর নির্ভর করছে। ব্যাংকে টাকা রাখা ও বিমানের টিকেট কাটার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ মানুষ এই বাজেটে খুশি হতে পারেনি। এ ছাড়া এক হাজার ৪৩টি পণ্য ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখাকে শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মনে করি।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংকে রাখা আমানতের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনার ইঙ্গিত করে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের অর্থমন্ত্রী জনগণের মধ্যে বসবাস করেন, সংসদে বসবাস করেন। তিনি এই সংসদেরই নেতা, তিনি বোবা-কালা নন। বাইরে সেসব আলোচনা হচ্ছে, আশা করি আমরা আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছতে পারব।’ সরকারের উচ্চ মহলে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজেট আগ্রহ জাগিয়েছে সারা দেশে। সব জায়গায় এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। এবারের বাজেট নিয়ে কোনো ভীতির কারণ নেই। তবে আলোচনা আর সমালোচনা রয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের কর্মী হিসেবে কথা দিচ্ছি, সবার পরামর্শ ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতির জন্য যেটা মঙ্গল হবে তা-ই করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি নিয়ে বাজেট দিয়েছি।’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এই বাজেট দেওয়া হয়েছে। সমালোচনা থাকবেই। দেখতে হবে বাজেটের কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কি না। আমাদের লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন।’ তিনি বলেন, এক কোটি ৩০ লাখ শিশুকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

তবে হইচই হচ্ছে মোটা চালের দাম বেশি কেন এ নিয়ে। খাদ্য সংকটের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কোথায় খাদ্য সংকট। কৃষকরা এবার ধানের দাম একটু বেশি পেয়েছেন। এখন তারা যেন আতঙ্কিত না হন চালের দাম কমে যাবে বলে।’ দেশে কৃত্রিম খাদ্য সংকটের মিথ্যা গল্প ফাঁদা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশের কোথাও খাদ্য সংকট নেই। হাওরে এত বড় বিপর্যয় ঘটার পরও সরকারের পদক্ষেপের কারণে কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। সরকার সবকিছু নিয়ে হাওরবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রতিদিন ইফতারের সময় মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’ ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুত্ফুল্লাহ বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। সারা বছর কাজ না করে এক মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। সাধারণ মানুুষের পকেট কাটা হচ্ছে। শামসুল হক টুকু বলেন, বিএনপি বার বার উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে। তারা নিজেরা দেশের উন্নয়ন করেননি, অন্যদেরও করতে দিতে চান না। চলতি বাজেটে কিছু সংশোধনী এনে পাস করা হলে দেশ সমৃদ্ধির পথে হাঁটবে বলে তিনি দাবি করেন।

 

সর্বশেষ খবর