বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
জমি প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত

ভোগান্তি শেষ হচ্ছে ১৫ লাখ মানুষের

৭ দিনেই খাজনা আদায়ের গেজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেষ পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের অহেতুক যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন রামপুরা থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত এলাকার ভূমি মালিকরা। দুশ্চিন্তার অবসান হচ্ছে এ অঞ্চলের ১৫ লাখ মানুষের। দীর্ঘদিন ধরে চলমান ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন তারা। কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই তারা এখন জমি কেনাবেচা, খাজনা পরিশোধ, মিউটেশনসহ সবকিছু করতে পারবেন। গতকাল এক বৈঠকে এ অঞ্চলের জমি ভূমি মালিকদের কাছে প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সাত দিনের মধ্যেই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে। সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমি সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি)সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, এ বিষয়ে গতকাল মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় রামপুরা থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত ১৩৮ এলএকেসে/৬১৬২, ৯১/৫৭৫৮, ৩২/৬৭৬৮ দাগের যেসব জমি টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে অধিগ্রহণের জন্য নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে ১৩৮৪ দশমিক ২৫ একর জমি প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে। এর পরপরই স্থানীয় জমি মালিকরা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস ধরে রামপুরা থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা তাদের জমি ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান ও ঢাকার ডিসি নানা অজুহাতে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। তারা জমি ভূমি মালিকদের ফেরত দিতে বাধার সৃষ্টি করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার সভা আহ্বান করা হলেও রহস্যজনক কারণে সেসব সভা বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি ভূমি প্রতিমন্ত্রীর নজরে আসার পর তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে সমস্যা সমাধানে তত্পর হন। মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, গতকালের সভায়ও বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে নানাভাবে সময় ক্ষেপণের চেষ্টা করা হয়। সভায় কেউ কেউ আপত্তি জানিয়ে বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সময় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত গতকালের সভায়ই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের পর থেকে ঢাকার ডিসির নির্দেশে বাড্ডা, জোয়ার সাহারা ও ভাটারা মৌজার ১৩৮৫ একর অবমুক্তকৃত সম্পত্তির খাজনা নেওয়া এবং নামজারি বন্ধ রাখার পর থেকে এ এলাকার হাজার হাজার ভূমি মালিক অসহায় হয়ে পড়েন। জরুরি প্রয়োজনে তারা কেউ জমি বেচাকেনা কিংবা কোনো উন্নয়ন করতে পারছেন না। বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নিতে না পারায় অনেকেই বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বাড্ডা, গুলশান ও ক্যান্টনমেন্ট তহসিল অফিসে কর্মরতরা জানান, প্রতিদিন তাদের অফিসে স্থানীয় লোকজন এসে জমির খাজনা নিতে কিংবা নামজারির আবেদন করেন। কিন্তু ডিসি অফিসের নির্দেশনার কারণে তাদের পক্ষে খাজনা গ্রহণ ও নামজারি সম্পন্ন করার কাজ করা সম্ভব হয় না। এর ফলে অনেকেই কান্নাকাটি শুরু করে দেন। বছরের পর বছর খাজনা পরিশোধের গেঁড়াকলে পড়ে নিজের বিপদের সময়ও জমি কিংবা ভিটেমাটি বিক্রি করতে পারছেন না বাড্ডার বিস্তৃত এলাকার লোকজন। শুধু ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ করতে না পারার কারণে রামপুরা থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক লাখ মানুষ এখন কঠিন সংকটে পড়েছেন। খাজনা গ্রহণ না করলে জমি বেচা যাবে না। ফলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। অসুস্থ মা-বাবা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন। এ কথা বলতে বলতে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকার ডিসি এবং রাজউক চেয়ারম্যানের অন্যায় ও বেআইনি সিদ্ধান্তের কারণে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে একটি সামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা বাড্ডা, ভাটারা ও জোয়ার সাহারায় মতবিনিময় সভা এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

সর্বশেষ খবর