শিরোনাম
শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন প্রার্থী খুঁজছে দুই দল

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

নতুন প্রার্থী খুঁজছে দুই দল

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শতাধিক আসনে নতুন মুখ খুঁজছে। এ ক্ষেত্রে এলাকার গণমানুষের প্রিয় নেতা, ক্লিন ইমেজ ও ত্যাগী নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দুই দলই বিতর্কিতদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপেক্ষাকৃত যোগ্য, তরুণ ও নারী নেত্রীদের প্রার্থী করার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করছে দুই দল। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও দলের হাইকমান্ড থেকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকেও গোপনে যোগ্য প্রার্থীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপি-প্রধান বেগম খালেদা জিয়া বেশ কয়েকজনকে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই হলো সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের তৃণমূল নেতা-কর্মী, সাধারণ ভোটারদের কাছে যারা গ্রহণযোগ্য তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে নৌকার টিকিট দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি ছয় মাস অন্তর জরিপ করছেন। প্রতিটি এলাকার সার্বিক চিত্র তার নখদর্পণে। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা এবার মনোনয়ন দেব।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি সব সময়ই নির্বাচনমুখী দল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমরা অংশ নিতে চাই। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রার্থী সংকট নেই। প্রতিটি আসনেই যোগ্য একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো সমস্যা নেই। তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি যোগ্য প্রার্থীকেই আগামীতে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীর সন্ধান করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদে এমপি আছেন এমন অনেকেই ছিটকে পড়বেন এবার। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় ব্যক্তিরা। একাদশ নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে যেখানে যেমন প্রার্থীর প্রয়োজন সেখানে তেমন প্রার্থী দেওয়া হবে। সেই নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীনরা জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে নিজেদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। করা হচ্ছে খসড়া তালিকা। বর্তমান এমপিদের জনপ্রিয়তা, বিগত সময়ে তাদের কর্মকাণ্ডে নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিবিহীন ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই বলেই মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। সে কারণে এবার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জনপ্রিয়তা তলানিতে গেছে এমন ১০০ থেকে ১৫০ এমপির তালিকা করা হয়েছে। তাদের ডেকে সতর্ক করার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা বাড়াতে বলা হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ চায়, বিএনপির অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় যেতে। আওয়ামী লীগের নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন। সে কারণেই এবার মনোনয়নে বেশ সতর্ক আওয়ামী লীগ। দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, এ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দল ও নেতৃত্বের প্রতি একান্ত অনুগত, বিতর্কহীন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কোনো বিতর্কিত, সন্ত্রাসী ইমেজের, জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য, দখলবাজির অভিযোগে অভিযুক্তদের কোনোভাবেই মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আর এমন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজে বের করতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বের বাইরেও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন, দল-সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য দলীয় সভানেত্রীর তিন শর্তকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা। এর মধ্যে যেসব নেতা-কর্মী শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড করেছেন, তারা প্রার্থী হতে পারবেন না। কোনো রাজাকার ও তার সন্তান নৌকা প্রতীক পাবেন না। দল থেকে বহিষ্কৃত কাউকে দলে এনে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। আর সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্থাও মাঠপর্যায়ে জরিপ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিচ্ছে। এরপর সব জরিপের ফলাফল মিলিয়ে দল ও সরকারের হাইকমান্ড চুলচেরা পর্যালোচনা করছেন। আর জরিপও প্রতি ছয় মাস অন্তর রিভিউ করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু আওয়ামী লীগ নয়, মুক্তিযুদ্ধের শক্তির জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাই। সে কারণে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে দলের মনোনয়ন দিতে হবে।’ তারা বলেন, বর্তমান সংসদে অনেক এমপি রয়েছেন, যাদের ইমেজ তলানিতে গেছে। দলের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে ‘আত্মীয় লীগ’ গড়ে তোলায় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। আগামীতে তাদের মনোনয়ন দিলে দলের লোকজনই ভোট কেন্দ্রে যাবে না। কাজেই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির খোঁজ করা হচ্ছে।

বিএনপি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সর্বত্রই চলছে তুমুল আলোচনা। দলীয় অফিস থেকে শুরু করে চায়ের টেবিলজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আগামী নির্বাচন। কোন আসনে দলের প্রার্থী কে তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, অন্তত ১০০ আসনে আসতে পারে ‘নতুন মুখ’। ২০০ আসনে সাবেক মন্ত্রী-এমপি বা যারা ২০০১ ও ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তারাই দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। এর মধ্যে যারা বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন, তাদের বাদ দেওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। অবশ্য সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়রাও মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে আন্দোলনে থাকা ত্যাগী নেতারা দলীয় টিকিট পেতে পারেন। এ তালিকায় দৌড়ে এগিয়ে আছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী নেত্রীও আগামীতে দলীয় প্রতীক পেতে পারেন। এরই মধ্যে সবুজ সংকেত পেয়ে অর্ধশত সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জানা যায়, স্থায়ী কমিটিসহ দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই শারীরিকভাবে দুর্বল। এরই মধ্যে কেউ কেউ মারাও গেছেন। উত্তরসূরি যোগ্য কেউ না থাকলে এসব আসনে নতুন মুখ আসবে। এ ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অনেক নতুন মুখই এবার নির্বাচন করবেন। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি হয়েছে। তাদের আসনগুলোয়ও আসবে নতুন মুখ। জামায়াতের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে বিএনপি বা জোটের অন্য কোনো দল থেকেও প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, ঈদের পর লন্ডনে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়ে বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করবেন। দেশে এসে সহায়ক সরকারের ঘোষণা দেবেন বিএনপি-প্রধান। এরপর সরকারের মনোভাব বুঝে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের মাঠে নেমে যাবেন। শেষ পর্যন্ত সহায়ক সরকারের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখার কৌশলও রয়েছে দলটির। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতিও থাকবে তাদের। সূত্রমতে, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তিন ক্যাটাগরিতে প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সাবেক এমপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং পেশাজীবীদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করা হবে। ৩০০ আসনেই বিএনপি প্রার্থী বাছাই করবে। পরে আলোচনার মাধ্যমে জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে তৃণমূলের মত নেওয়া হতে পারে। জোটের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে সর্বোচ্চ ৪০টি আসন। তবে ২০-দলীয় জোটের বাইরেও আলাদা কোনো প্লাটফরম হলে সেখানে আরও কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। জানা যায়, সব ঠিক থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনটি আসনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে পারেন। এগুলো হলো ফেনী, বগুড়া ও দিনাজপুর। নির্বাচনের সুযোগ পেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়ার একটি আসন থেকে লড়তে পারেন। তার সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমানও সিলেটের বিয়ানীবাজারে পৈতৃক এলাকা থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রার্থীর বিষয়টি অনেকাংশে যাচাই-বাছাই করে ফেলেছে। সময় হলেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।’

সর্বশেষ খবর