সোমবার, ১৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিদায় মাহে রমজান

আল্লাহ দেখেন বান্দার আন্তরিকতা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

রমজানুল মোবারকের আজ ২৩তম দিন। চান্দ্র মাস কোনোটি ৩০ দিনে আবার কোনোটি ২৯ দিনে হয়ে থাকে।

 সেই অনুযায়ী রমজান আর মাত্র ছয় বা সাত দিন পর বিদায় নেবে। কিন্তু ২৯ দিন হলেও সওয়াবের কোনো ঘাটতি হবে না। অর্থাৎ যদি ৩০ দিন না হয় তাহলে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এ বছর রমজানের সওয়াব কম পাওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) নিজের দুই হাতের আঙ্গুল তিনবার দেখিয়ে ইরশাদ করেন, মাস এ রকম, এ রকম ও এ রকম। অর্থাৎ পুরো ৩০ দিন। তিনি আবার দুই হাতের আঙ্গুলগুলো তিনবার দেখিয়ে বললেন, মাস এমনও। এবার তিনি একটি আঙ্গুল বন্ধ রাখলেন। অর্থাৎ ২৯। তিনি বোঝাতে চাইলেন, চান্দ্র মাস কখনো ৩০ দিনে আবার কখনো ২৯ দিনে হয়। প্রকৃতপক্ষে একদিনের তারতম্যের কারণে পবিত্র মাসের ফজিলতের বা পুরস্কারের তারতম্য হবে না। কেননা মাসের দিনসংখ্যা কম-বেশি হওয়া মানুষের হাতে নয়। এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য। বোখারি ও মুসলিমসহ হাদিসের অনেক ইমাম তাদের গ্রন্থে হাদিসটি সংকলন করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ঈদের দুই মাসে ঘাটতি হয় না রমজান ও জিলহজ। ঈদুল ফিতর আসে রমজানের শেষে শওয়াল মাসে। তবুও রমজানকে ঈদের মাস বলা হয়েছে। কারণ ঈদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হয় রমজানেই। হাদিসটির তাৎপর্য ব্যাখ্যায় মনীষীদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কারও কারও মতে হাদিসের অর্থ একই বছরে এ দুই মাস ২৯ দিনে হয় না। রমজান যদি ২৯ দিনে হয়, তাহলে সেই বছর জিলহজ অবশ্যই ৩০ দিনে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তেমনটি হয় না। একই বছরে রমজান ও জিলহজ উভয়টিই ২৯ দিনে হওয়ার নজির কম নয়। এ জন্য কারও কারও মতে রসুলুল্লাহ (সা.) একটি নির্দিষ্ট বছর সম্পর্কে বলেছিলেন, এবার যেহেতু রমজান ২৯ দিনে হয়েছে, সুতরাং জিলহজ অবশ্যই ৩০ দিনে হবে। কিন্তু হাদিসটির সবচেয়ে সুন্দর ও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা করেছেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়হ প্রমুখ মুহাদ্দিস। তারা বলেন, এখানে এ দুই মাসের ফজিলত বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। বিশ্বপ্রকৃতিতে আল্লাহর ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী অত্যন্ত মাহাত্ম্যের মাস রমজান ও জিলহজ কখনো ২৯ দিনে আবার কখনো ৩০ দিনে হবে। কিন্তু এ দুই মাসে ইবাদতের বিনিময়ে মুমিন বান্দাদের জন্য যে প্রতিদান বরাদ্দ আছে তাতে ঘাটতি হবে না। পুরো এক মাস রোজা পালনের বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা যে পুরস্কার তার প্রিয় বান্দাদের জন্য ঘোষণা করেছেন তা যেমন ৩০ দিনের মাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি ২৯ দিনের মাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রসুল (সা.)-এর সঙ্গে ৩০ দিনের চেয়ে ২৯ দিন রোজা রেখেছি বেশিবার। আল্লাহ দেখতে চান বান্দার নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা। রমজানের চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা শুরু করতে হবে। আর শওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা শেষ করতে হবে। হে আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন, আমরা যেন সবকটি রোজা শেষ করে ঈদের জামাতে শরিক হতে পারি।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর