শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংসদে তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী কঠোর সমালোচনা এমপিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে তোপের মুখে পড়লেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংসদ সদস্যরা বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তার কঠোর সমালোচনা করলেন। ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক, ব্যবসার ওপর ঢালাও ১৫% ভ্যাট বাড়ানো ও সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সরকারি দলের সদস্যরা। বলেন, অর্থমন্ত্রী, আপনার কাজ বাজেট পেশ করা। আপনি করেছেন। এই সংসদের ৩৫০ জন জনগণের প্রতিনিধি ঠিক করবেন (বাজেটে) জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে, থাকবে না। জনগণের কষ্ট আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করেন। ঢালাওভাবে ভ্যাট বিশ্বে কোথাও নেই। এমপিদের দাবি অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেট থেকে এসব জনস্বার্থবিরোধী প্রস্তাব প্রত্যাহার না করলে ফ্লোর ক্রসিংয়ের জন্য সংবিধান সংশোধনেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।  এদিকে তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতার মুখে গতকাল অধিবেশন কক্ষ ছাড়তে বাধ্য হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় তাকে বয়সজনিত কারণে কম কথা বলার পরামর্শ দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বাজেটে ঢালাওভাবে ভ্যাট বাড়ানোর বিরোধিতা করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে তেল, গ্যাসের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন। ফলে সরকার এসবের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। এতে শুধু বিদ্যুৎ বিলই বাড়বে ৭ শতাংশ। এটা করলে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। তিনি তেল- গ্যাসের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান। ব্যাংক আমানতের ওপর অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক আরোপ ও ঢালাওভাবে ভ্যাট ধার্যের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘নির্বাচনবিরোধী’ বাজেট বলেও অভিহিত করেন ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা। সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর বিষয়েও প্রবল আপত্তি জানান তারা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আপনার কিছু কথাবার্তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। আপনি কম কথা বলেন। বয়স হয়ে গেছে কখন কী বলে ফেলেন।’ আবগারি শুল্ক আগের অবস্থায় রাখার দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক করেছেন জানা নেই। হল-মার্কের চার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এ টাকা কিছু নয়। তাহলে কেন সামান্য টাকার জন্য সারা দেশে মানুষের মধ্যে আক্ষেপ তৈরি করলেন। ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সরকারি দলের এই এমপি বলেন, অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেছেন গণহারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বছরে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট আহরণের নজির নেই। ব্যাংক খাতে লুটপাটের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক কে এক হাজার কোটি টাকা মূলধন দেওয়া হচ্ছে। কার টাকা কেন দিচ্ছেন? তারা দুর্নীতির জন্য লুটপাট করবে আর মূলধন দিতে হবে আমাদের? তিনি বলেন, সরকারি টাকা এভাবে লুটপাট করতে দেওয়া যাবে না। এ সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও আদালতের সরকারি কৌঁসুলিদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান। সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বাজেটের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অনেক শ্রেণির মানুষকে ভর্তুকি দেন। ঋণ খেলাপিদের বিশাল লিস্ট দিয়েছেন। কই তাদের ধরতে পারেন না। ব্যাংকের টাকা পাচার বন্ধ করতে পারছেন না। আর নিম্ন মধ্যবিত্তের ওপর কর চাপিয়ে দিয়েছেন। এটার প্রতিবাদ করছি। তিনি বলেন, সামনে আমাদের নির্বাচন আসছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করে দিলে ভোট আসবে না। মানুষকে যদি বিভ্রান্ত করে দেই তাহলে সমস্যা হবে। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার না কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এটা কমানো ঠিক হবে না। মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম সংবিধানের আর্টিকেল ৭০-এর সংশোধনের দাবি জানিয়ে বলেন, মাননীয় স্পিকার আপনি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনী এনে বাজেটের বিরুদ্ধে এমপিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, তাহলে দেখবেন, অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে আর অনড় অবস্থানে থাকতে পারবেন না। আমাদের কথারও মূল্যায়ন হবে। বাজেট আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সংসদীয় কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন, বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, এইচ এন আশিকুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, মাহবুব আলী, মোসলেম উদ্দিন, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ইসরাফিল আলম, জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল, জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না, সেলিম উদ্দিন, মাহজাবীন মোরশেদ ও বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ।

সর্বশেষ খবর