মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা

সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ, পুলিশি বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাঙামাটিতে ত্রাণ বিতরণে যাওয়ার পথে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগর সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বরিশাল মহানগর, মৌলভীবাজার, বরগুনাসহ কয়েকটি জেলায় পুলিশ বাধাও দেয়। ঢাকার কয়েকটি থানায়ও মিছিল বের করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশেই বিএনপির মহাসচিবসহ নেতাদের ওপর হামলা হয়েছে। গণতন্ত্রের সর্বশেষ অস্তিত্ব ছিন্নভিন্ন করে দিতেই এ হামলা।’

তিনি বলেন, সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের নির্দেশেই বিএনপি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। গুণ্ডামির এই নব সংস্করণ জনসমর্থন ছাড়া দুঃশাসন টিকিয়ে রাখারই ইঙ্গিতবহ। গণতন্ত্রের সর্বশেষ অস্তিত্বকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার জন্যই এটি একটি সহিংস আগ্রাসী পদক্ষেপ। এরা বিরোধী দলের মানবকল্যাণধর্মী, সমাজসেবামূলক কর্মসূচিকেও বানচাল করতে হিংস  আক্রমণ চালায়।’ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি জানায়, দুপুর ১টার দিকে দয়াগঞ্জ জুরাইন ৮০ ফুট প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শ্যামপুর-কদমতলী থানা বিএনপি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার যুগ্ম সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিলে সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হোসেন, সালাউদ্দিন রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টর চৌরাস্তার জমজম মার্কেটের সামনে বিএনপি নেতা হাজী দুলালের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। ডেমরা থানার সারোলিয়ার হাজীনগর এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন রতনের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়।

লালবাগের নবাবগঞ্জ সিকমা বাজার হয়ে কেল্লার মোড় এলাকায় থানা বিএনপি নেতা সাঈদ হোসেন সোহেলের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল ইমারজেন্সি গেটের সামনে থেকে ঢাবি একুশে হল পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম স্বপন। এ ছাড়া রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, সূত্রাপুর ও কামরাঙ্গীর চর থানায় বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

বিভাগীয় নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা জানান—

বরিশাল মহানগরে বাধা : বরিশাল মহানগরে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টায় সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগরের সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার জিয়া, আনোয়ারুল হক তারিন, খন্দকার আবুল হাসান লিমন প্রমুখ। এর আগে সকাল ১১টায় নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন উত্তর জেলার সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম উদ্দিন, ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম সুজন প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হলে অশ্বিনী কুমার হলের মূল ফটকে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।

রাজশাহীতে বাধা : রাজশাহীতে পুলিশের বাধায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল পণ্ড হয়ে গেছে। মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা নগরীর মালোপাড়ায় নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। কিন্তু এর আগেই কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেয় পুলিশ। পরে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। এরপর নেতা-কর্মীরা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ করেন।

মৌলভীবাজারে বাধা : মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে দলীয় নেতা-কর্মীরা শহরের চৌমোহনা চত্বরে সমবেত হলে পুলিশ প্রতিবাদ মিছিল করতে দেয়নি। জেলা বিএনপির সহসভাপত্বি আবদুল মুকিত বলেন, ‘পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আজ হত্যা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহমদ জানান, অনুমতি না নিয়ে কর্মসূচি পালন করার জন্য তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দুপুরে মৌলভীবাজার শহরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ভিপি মিজানের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল  বের হয়। মিছিলটি শহরের টিসি মার্কেট থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে এম সাইফুর রহমান  রোডের শাহ মোস্তফা গার্ডেন সিটির সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

দিনাজপুরে বাধা : বেলা ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের করার চেষ্টাকালে পুলিশ বাধা দেয় বিএনপিকে। এ সময় পুলিশি বেষ্টনী ভেদ করে খণ্ড মিছিল বের করেন দলের নেতা-কর্মীরা। পরে শর্তসাপেক্ষে শহরের লিলি মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করতে দেওয়া হয় তাদের। মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ জেড এম রেওয়ানুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান উজ্জল প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান মিয়া এবং সাবেক মহিলা এমপি রেজিনা ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ অন্যরা।

বগুড়া : বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বগুড়াতেও। শহরের নবাববাড়ী রোডে জেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, জনগণের কাছে এ সরকারের দায়বদ্ধতা নেই। তাই পাহাড়ধসের ভয়াবহ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এতে আরও বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চান, বিএনপি নেতা আবদুর রহমান, এম আর ইসলাম স্বাধীন, শাহ মেহেদী হাসান হিমু, আবদুল ওয়াদুদ প্রমুখ।

নরসিংদী : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেল খানার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সেখানে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, সুলতানউদ্দিন মোল্লা, আকবর হোসেন, একেএম গোলাম কবির কামাল, নূরুল ইসলাম, আমিনুল হক বাচ্চু, শাজাহান মল্লিক প্রমুখ। সমাবেশে খায়রুল কবির খোকন বলেন, বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নগ্ন হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকার পতনের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায়।

কোন্দলের কারণে জোরালো প্রতিবাদ হয়নি চট্টগ্রামে, নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় অন্তঃকোন্দলের কারণে জোটবদ্ধ প্রতিবাদ করতে পারেনি চট্টগ্রাম বিএনপি। এ ঘটনায় কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন সিংহভাগ নেতা। যারা উপস্থিত ছিলেন তারাও দায়সারাভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশ চট্টগ্রামের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

চট্টগ্রাম বিএনপির কোন্দল নিরসনের জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম শামীম। তিনি বলেন, ‘কোন্দল নিরসন করতে বিএনপি চেয়ারপারসন উদ্যোগ নিয়েছেন। ঈদের পর খালেদা জিয়া নিজেই চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণে জেলা কমিটি ঘোষণা করবেন। একই সঙ্গে মহানগরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, রবিবার বিএনপি মহাসচিব চট্টগ্রাম হয়ে রাঙামাটি যাওয়ার কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত থাকলেও তা জানতেন না চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নিজেদের অবস্থান জাহির করতে অন্যদের বিষয়টা জানতে দেননি। যারা জানতেন তাদেরও ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে যাওয়ার জন্য বলেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাই চট্টগ্রাম বিএনপির সিংহভাগ নেতা মহাসচিরের গাড়িবহরে ছিলেন না। ওই নেতার দাবি, বিএনপি মহাসচিবের চট্টগ্রাম হয়ে রাঙামাটি যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় নেতারা জানতে পারলে নেতা-কর্মীরা নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে প্রটোকল দিতে পারতেন। নেতা-কর্মীরা মহাসচিবের বহরে নিরাপত্তা দিলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এ ধরনের ঘটনার জন্য বিএনপির কোন্দলই অনেকাংশে দায়ী। কোন্দলের কারণেই চট্টগ্রাম বিএনপির এ বেহাল দশা।বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম শামীম বলেন, ‘মহাসচিব আসার বিষয়টি চট্টগ্রামের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে সবাই জানতেন। তবে রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের সবাই বহরে যেতে পারেননি।’ জানা যায়, অন্তঃকোন্দলে জর্জরিত চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। অন্তঃকোন্দলের কারণে গত মে মাসে উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশ পণ্ড হয়। এরপর উত্তর ও দক্ষিণ জেলার একাধিক শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্র। এরপর দলীয় কোন্দল আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। এর মধ্যেই গত রবিবার রাঙ্গুনিয়ায় দলের মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা হয়। ওই হামলায় দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি শীর্ষ আট নেতা আহত হন। মহাসচিব আক্রান্ত হলেও তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়নি তিন সাংগঠনিক ইউনিটের পক্ষ থেকে। গতকাল কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা করা হলেও তাতে অনুপস্থিত ছিলেন অনেকে। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে ওই বিক্ষোভ সমাবেশে ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা সভাপতি জাফরুল ইসলাম, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিনসহ শীর্ষ পর্যায়ের হাতে গোনা কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর