মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

অনিশ্চিত সড়ক সংস্কার পাহাড়ে আবারও ধস

রাঙামাটি প্রতিনিধি

দিনভর বৃষ্টির কারণে গতকাল রাঙামাটির সাপছড়ি সড়কে আবারও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ধসের কারণে জেলার ১৪৫টি স্থান বিধ্বস্তও হয়েছে। এতে সড়ক সংস্কারের কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।     এদিকে গতকাল দুপুর থেকে টানা বৃষ্টিতে ঘাগড়া-বরইছড়ি-কুকিমা সড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের মানিকছড়ি, সাপছড়ির ফুরামন, মগাছড়ি, ডাকবাংলো, কাশখালী, কলাবাগন, শালবাগান ও কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়কের বিলাইছড়িপাড়া ও বড় আদম সড়ক সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব সড়কে এখন হাঁটারও অবস্থা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটি এখন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ধসের আতঙ্কও বিরাজ করছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরকারের তরফ থেকে পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও সড়ক দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হলেও এরই মধ্যে এক সপ্তাহ চলে গেছে, কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই করেনি। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদকে। তবে উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু মুছা জানান, যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব। যেহেতু বৃষ্টিপাত হচ্ছেই সেহেতু নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

পাহাড়ে নেই ঈদের আনন্দ : মাত্র কদিন পরই ঈদ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়ের ঘর ভাঙা স্বজন হারানো মানুষের কারও মধ্যেই ঈদ নিয়ে কোনো উৎসাহ নেই। রাঙামাটির পাহাড়ধসে বাবা-মা হারানো ছয় বছরের মিমকে থালা হাতে গতকাল দেখা গেছে আশ্রয় কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে আহার জোগানোর যুদ্ধে শামিল হতে। তার সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, তদের মধ্যে রঙিন কাপড়ের কোনো স্বপ্ন নেই। বরং কীভাবে দেড় বছরের বোন সুমাইয়াকে খাওয়াবে সেটাই তার কাছে বড় বিষয়। সে জানে তার বাবা-মা নেই, কিন্তু কখনই যে তারা আর ফিরবে না, তা জানা নেই। তাই অপলক দৃষ্টিতে সবার মাঝে খুঁজে বেড়াচ্ছিল বাবা-মাকে। রাঙামাটি সরকারি কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষগুলোর মধ্যে কেউ বাবা হারিয়েছে। কেউ হারিয়েছে মা। আবার কেউ পুরো পরিবার হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব। সামনে ঈদ কিন্তু ঘর ভাঙা মানুষ ভাবছেন, আশ্রয় কেন্দ্রের পাট চুকালে তারা যাবেন কোথায়? তাই উৎসবের বিলাসিতা তাদের পুলকিত করছে না।

সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন : মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রবল বর্ষণে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় পাহাড়ধসে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ ৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। মাটি সরিয়ে লাইন পরিষ্কার করায় গতকাল দুপুর ১২টায় রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। রেলওয়েসূত্র জানায়, রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর মাগুরছড়া পাহাড়ি এলাকায় ২৯৮-এর ১/২ নম্বর খুঁটি এলাকায় পাহাড়ধসে মাটি রেলপথের ওপর পড়ে। এতে সকাল ৮টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন ভানুগাছ স্টেশনে আটকা পড়ে। খবর পেয়ে রেলওয়রে কর্মীরা সকাল ৯টা থেকে পাহাড়ের মাটি সরানোর কাজ শুরু করে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর মাটি সরিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, রাঙামাটি-বান্দরবানে ভূমিধসের ফলে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গত পরিবারের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলাসহ জরুরি ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। গত কয়েক দিনে রাঙামাটির যোগাযোগব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং রাস্তাঘাট পুনঃসংস্কারে তিন পার্বত্য জেলায় ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ও ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক সদস্য বিপুলসংখ্যক ভারী যন্ত্রপাতিসহকারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বান্দরবানের রদমা ও রাঙামাটির ঘাগড়া এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের ২৩৩ জন সদস্য ২০টি ভারী যন্ত্র (১০টি ডাম্পার, ১টি হুইল লোডার, ৫টি এক্সেভেটর, ১টি হুইল ডোজার এবং ১টি লোডার) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে এবং পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপনের জন্য সেনাবাহিনী প্রতিকূল ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ি থেকে লংগদু পর্যন্ত সড়কপথে এবং সেখান থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত নদীপথে ১টি জেনারেটর রাঙামাটিতে পাঠানো হয়।

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম রাস্তা আগামীকাল বুধবারের মধ্যে হালকা যানবাহন এবং আগামী এক মাসের মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে এবং রতমা-বান্দরবান রাস্তায় যান চলাচল করতে আরও প্রায় সাত দিন লাগবে বলে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর