বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঈদের পর শুরু নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তুতি, আইন সংস্কারের খসড়া তৈরি হচ্ছে, ২৫ জুলাই শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের নীতিমালা নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তারা

গোলাম রাব্বানী

ঈদের পর শুরু নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ

ঈদের পরপরই শুরু হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের মহাকর্মযজ্ঞ। আইন সংস্কার ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া জুলাইয়ে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও এনজিওগুলোর সঙ্গে সংলাপ জুলাইয়ে শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে। পাশাপাশি ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ এবং নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। এবারের নির্বাচনে ‘অটো সিল’ ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে ইসি। এ ছাড়া নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়ে দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছে ইসি।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণ হতে পারে। সে পরিকল্পনা নিয়েই ইসি কাজ করছে। প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। সাংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিতে এরই মধ্যে চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে পৃথক চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সহজ এবং যুগোপযোগী করতে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার, অভিজ্ঞ সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। এজন্য চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সংলাপের সুপারিশ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এবারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে নির্বাচনী আইন সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আইন সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাব নিয়েছে ইসি সচিবালয়। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে এসব আইন সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এজন্য সংলাপ বিষয়ে প্রযোজনীয় কাগজপত্র তৈরি করছে ইসি সচিবালয়। চলতি বছরের জুলাই থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণবিষয়ক সময়সীমা নির্ধারণ করেছে ইসি। এ বছরের আগস্টের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করবে ইসি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোট কেন্দ্র প্রস্তুতের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত। ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারদের বাদ দেওয়ার জন্য নতুন করে ভোটার হালনাগাদ করা হবে নির্বাচনের আগেই। এজন্য ২৫ জুলাই থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর ৩০০ আসনের জন্য ভোটার তালিকা মুদ্রণ করা হবে আগামী বছরের জুনের মধ্যে। ইসি সচিব মো. আবদুল্লাহ নির্বাচন ভবনে গতকাল এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, ২৫ জুলাই থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের পর ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হবে ২০ আগস্ট থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। খসড়া তালিকা প্রকাশ হবে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি। তিনি আরও জানান, যারা এরই মধ্যে ঠিকানা স্থানান্তর করেছেন, তাদের নতুন ঠিকানায় ভোটার স্থানান্তরের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট ফরম-১২ পূরণ করতে হবে এবং যে এলাকায় ভোটার হতে চান সে এলাকায় থানা নির্বাচন অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে। দেশে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ১০ কেটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৭। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এখানে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ হয় জনসংখ্যার ঘনত্বের ভিত্তিতে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় যদি ভবিষ্যতে সীমানা নির্ধারণ করতে হয়, তাহলে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর আসন বেড়ে যাবে। গ্রামাঞ্চলে কমে যাবে। এতে বৈষম্য তৈরি হতে পারে। তাই এসব সমস্যার সমাধানে ভবিষ্যতে জনসংখ্যা নয়, ভোটের সংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে কিছু আইনগত সমস্যা সমাধান করা হবে।’

সংসদ নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে নির্বাচনী রোডম্যাপে। এজন্য চলতি বছরের অক্টোবরে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চাইবে ইসি। আগামী বছরের জানুয়ারিতে নিবন্ধন প্রদান এবং এপ্রিলের মধ্যে রাজনৈতিক দলের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া আগামী বছরের জুলাই থেকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে ইভিএম বিষয়ে মতামত দিয়ে তা ব্যবহারের বিষয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন প্রস্তুত করা হবে। এরপর তা ব্যবহারের বিষয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে প্রচার শুরু করা হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে মক ভোটিংয়ের ব্যবস্থাও করবে ইসি। অটো সিল ব্যবহার : আগামী সংসদ নির্বাচনে অটো সিল ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। এতে কালি ব্যবহার করতে হবে না। এ ছাড়া স্মার্ট গোপন ভোটকক্ষ, স্মার্ট অমোচনীয় কালিও ব্যবহার করা হবে। এসব জিনিসপত্র সংগ্রহে সহযোগিতা করবে ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা তাদের (ইউএনডিপি) কারিগরি সহযোগিতা চাই। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে ভোটার, প্রার্থী ও ইসি কার কী দায়িত্ব তা নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। এ ক্ষেত্রে তারা প্রচার উপকরণ প্রস্তুতের ব্যাপারে সহায়তা করবে।’

সর্বশেষ খবর