শনিবার, ২৪ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

টিকিট নেই বিমানে হেলিকপ্টারেও চাপ

মির্জা মেহেদী তমাল

লন্ডন থেকে ঈদ করতে দেশে ফিরেছে ফিরোজ দম্পতি। যাবেন তারা কক্সবাজার। কিন্তু কোনো টিকিট পাচ্ছেন না। বাসের টিকিট নেই। ফ্লাইটের টিকিটও তারা পেলেন না। যানজটের কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়ারও সাহস পাচ্ছেন না। যোগাযোগ করলেন একটি হেলিকপ্টার সার্ভিসের সঙ্গে। সেখানেও তারা লাইনে পড়লেন। অবশেষে তারা বুকিং ঈদের দুই দিন আগের শিডিউল পেলেন।

একইভাবে হবিগঞ্জে নানার বাড়ি যেতে চাইছেন সুইডেন থেকে আসা হিমু। তারা কয়েকটি হেলিকপ্টার সার্ভিসে যোগাযোগ করেছেন। যানজট এড়াতে ফিরোজ দম্পতি ও হিমুর মতো হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভর করছেন উচ্চবিত্তরা। ছুটছেন হেলিকপ্টার সার্ভিসের খোঁজে। ফলে অন্যান্য যানবাহনের মতো হেলিকপ্টার সার্ভিসেও বুকিংয়ে লাইন লেগেছে।

ঢাকার বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বুকিং সন্তোষজনক। যাত্রীর চাপ রয়েছে। স্কয়ার হেলিকপ্টার সার্ভিসের ম্যানেজার (অপারেশন্স) শেখ আসাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বুকিং চলছে। হেলিকপ্টার ভাড়া ঘণ্টায় আগের চেয়ে কমিয়ে এখন করা হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। একই রকম তথ্য পাওয়া গেল হেলিকপ্টার সার্ভিসের অন্য কোম্পানিগুলো থেকে। তারা বলেন, তাদের হেলিকপ্টারগুলো মূলত করপোরেট ক্লায়েন্টনির্ভর। সারা বছর নির্ধারিত প্রচুর ক্লায়েন্ট থাকে। তবে এবার ঈদের আগে-পরে ভালো ভিড় হয়েছে। এখনো বুকিং আসছেই।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৯টি কোম্পানির ২০টি হেলিকপ্টার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সার্ভিস দিলেও বাকিরা নিজেদের ব্যবসায়িক প্রয়োজনের পাশাপাশি হেলিকপ্টার ভাড়া দিচ্ছে। ঈদের আগে ও পরে বাড়তি যাত্রী পরিবহন করতে প্রস্তুত তারা। এদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইনগুলোতেও ঈদযাত্রীরা ভিড় করছেন। অধিকাংশ এয়ারলাইনসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। যাত্রীদের ভিড়ের কারণে এয়ারলাইনসগুলো অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে রাজধানীর বিত্তশালীদের অনেকে ঈদের সময় হেলিকপ্টার সার্ভিসে যাতায়াত করছেন। সড়কপথের ভোগান্তি এড়িয়ে দ্রুত গ্রামের বাড়ি যেতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেন তারা। হেলিকপ্টার কোম্পানিগুলোও এ সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকে।

সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, বর্তমানে হেলিকপ্টার বাণিজ্যিক সার্ভিসে রয়েছে সিকদার গ্রুপের আরঅ্যান্ডআর এভিয়েশন ও সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস। এ ছাড়া আরও আছে ইউনিয়ন গ্রুপের বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস, স্কয়ার গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, বিআরবি গ্রুপ, ইয়াংওয়ান (আরিয়ান) গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ, আই এভিয়েশন ও পারটেক্স গ্রুপ। এর বাইরে আরও কয়েকটি কোম্পানি পরীক্ষামূলক এভিয়েশন ব্যবসা করছে।

বিমানের টিকিট শেষ : এদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ আরও বেশ কয়েক দিন আগেই। সড়কপথে ভোগান্তির ভয় আর রেলপথের টিকিটের অনিশ্চয়তার কারণে এবার বিমানে চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে ২২ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। এই এক সপ্তাহের সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো। ঈদের সময় বাড়তি চাহিদার কারণে বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো তাদের নির্ধারিত ফ্লাইটের অতিরিক্ত কিছু ফ্লাইট চালানোর পরিকল্পনা করেছে। ঈদ উপলক্ষে এবার বিমানের টিকিটের অনেক চাহিদা। আমাদের সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। অন্য বছরের চেয়ে এবার চাপ একটু বেশি।’

বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ সূত্র বলেছে, অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ঈদের আগের-পরের এক সপ্তাহের নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত আরও চার-পাঁচটি ফ্লাইট চালু করছে বিমান। অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানগুলো ছোট হওয়ায় আসন সংখ্যা কম। এ জন্য অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি নভোএয়ার, রিজেন্ট এয়ার, ইউএস বাংলার ফ্লাইট চলাচল করছে।

সর্বশেষ খবর