রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঈদ উদ্‌যাপনে পাঁচ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে

জুলকার নাইন

পবিত্র ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটি কাটাতে প্রতি বছরের মতো এবারও বড়সংখ্যক বাংলাদেশি যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এ সংখ্যা এবার পাঁচ লাখ ছুঁয়েছে বলে ধারণা করছেন ট্রাভেল এজেন্ট, এয়ারলাইনস ও কাস্টমস-সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্য রয়েছেন কয়েক হাজার। অন্যান্যের মধ্যে উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি বড়সংখ্যকই মধ্যবিত্ত পরিবারের। বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণকারীর সংখ্যা পরিবর্তনের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে বেশকিছু গুণগত পরিবর্তনও দেখা গেছে। এখন শুধু থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া নয়, বাংলাদেশিদের ঘুরতে যাওয়া দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন দেশ। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটানের মতো অপ্রচলিত পর্যটন গন্তব্যে এবার ঈদের ছুটি কাটাবেন প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি। অবশ্য ঈদের আগে দেশের বাইরে গিয়ে শপিং করে এসেছেন প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি। আর ঈদ কাটাতে দেশের বাইরে যাওয়াদের অনেকে নিজেদের চিকিৎসাও সেরে আসবেন সেখান থেকে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি এস এম মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে দুই হাজারের বেশি ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে ইতিমধ্যে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি বিদেশে ঈদের ছুটি কাটাতে চলে গেছেন। এই হিসাব শুধু যারা ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে এবং বিমানে যাচ্ছেন তাদের। সড়কপথে বা নিজ উদ্যোগে যাওয়াদের সংখ্যাও কম নয়। এবার সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারত। অন্যদের বড়সংখ্যকের গন্তব্য ইন্দোনেশিয়ার বালি, মালদ্বীপের নীল সমুদ্র, শ্রীলঙ্কা-ভুটানের পাহাড় দেখা। কয়েক হাজার বাংলাদেশি বিশেষ প্যাকেজে ইউরোপ ট্যুর ও মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি ভ্রমণে যাচ্ছেন বলেও জানান আটাব সভাপতি। এস এম মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেন, তবে ভারতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি যাচ্ছেন ঈদের ছুটি কাটাতে। তাদের বেশির ভাগ ট্যুর অপারেটরদের সাহায্য ছাড়াই বিভিন্ন পথে ভ্রমণ করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে ভ্রমণ করেন। এর প্রায় চার ভাগের এক ভাগ যান ঈদুল ফিতরের ছুটিতে। পরিবারের সব সদস্যের লম্বা ছুটি এর অন্যতম কারণ। তবে প্রতি বছরই ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছে। গত এক দশকে এ সংখ্যা প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। এ কারণে প্রতি বছর রমজানের বেশ আগেই ঈদের সময়ের বিমান টিকিট শেষ হয়ে যায়। অবশ্য এবার রমজানের মাঝামাঝি পর্যন্ত টিকিট পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটর ও এয়ারলাইনস-সংশ্লিষ্টরা। এয়ারলাইনস-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার টিকিট থাকাকে আগ্রহের কমতি বলার কোনো সুযোগ নেই। বরং আগের তুলনায় এয়ারলাইনস ও বিমানে টিকিটের সংস্থান বেশি হওয়ায় এবার কিছুটা বেশি সময় ধরে টিকিট পাওয়া গিয়েছে। আবার মাসখানেক আগে ট্যুর প্যাকেজের পুরো টাকা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতার কারণে বুকিং থাকা অনেক টিকিট ফেরত এসেছে বলেও মনে করছেন তারা।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়শেন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি তৌফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, দেশের এয়ারলাইনগুলোর বিদেশি হোটেলের সঙ্গে যৌথভাবে ঘোষিত প্যাকেজ ও ট্যুর অপারেটরদের বছরব্যাপী প্রচারণার কারণেই ঈদের লম্বা ছুটি দেশের বাইরে কাটানোর পরিকল্পনা করতে পারছেন বাংলাদেশিরা। অবশ্য সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে ভারতে যাওয়ার বিষয়ে। অনেক ক্ষেত্রে কক্সবাজার থেকেও কলকাতা যাওয়া সুলভ। আর পরিকল্পনা করে বিদেশ যাওয়াদের মধ্যে যারা এর আগে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছেন, এবার তাদের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ যাচ্ছেন ইউরোপে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি টোয়াবের সদস্য অপারেটরদের মাধ্যমে বিদেশে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন টোয়াব-সংশ্লিষ্টরা।

চিকিৎসক ও সরকারি কর্মকর্তারাও আছেন তালিকায় : অনুমতি নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় ঈদের আগে বা পরে কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রায় এক হাজার সরকারি কর্মকর্তা ও চিকিৎসক অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন। সরকারি বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সারা বছর চিকিৎসাসেবায় থাকা ডাক্তারদের একটি বড় সংখ্যা এ বছর দল বেঁধে যাচ্ছেন আজমির শরিফ ও আগ্রার তাজমহল দর্শনে। তাদের বেশির ভাগই ১৫ দিনের ছুটির জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপসচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব পদমর্যাদার পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। আবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে ঈদে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার আবেদন করেছেন জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর পদস্থদের বেশ কয়েকজন।

সর্বশেষ খবর