বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সড়কে মরণযাত্রা

নিহত ৪২ আহত ২০০

প্রতিদিন ডেস্ক

ঈদের দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত তিন দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ সময় আরও দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— ঢাকা : গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ঈদের ছুটির তিন দিনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল রাজধানীর সড়কগুলো। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে যানবাহনগুলো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এদিন শুধু রাজধানীতেই বেপরোয়া গাড়ির চাপায় বনানী, যাত্রাবাড়ী, শেরেবাংলা নগর, খিলগাঁও ও মতিঝিলে পাঁচজন নিহত হন। আহত হয়েছেন শতাধিক। আহতদের অধিকাংশই পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

রবিবার সকাল ৯টা। পঞ্চাশার্ধ্ব মোহাম্মদ আলী রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে একটি দ্রুতগামী বাস তাকে ধাক্কা দেয়। তিনি ছিটকে পড়েন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু ঘটে। ফাঁকা সড়কে দুটি বাসের আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রাণ দিলেন আলী।

ঈদের পরদিন বিকাল ৪টা। হাতিরঝিলে তখন হৈ-হুল্লোড়ে মশগুল নরসিংদীর তানভীরসহ তার বন্ধুরা। হঠাৎ উল্টোদিক থেকে বেপরোয়া গতিতে এসে তানভীরের গায়ের ওপর উঠে পড়ল একটি প্রাইভেট কার। ছিটকে পড়েন তিনি। তাকে ধরাধরি করে নিরাপদে নেওয়া হয়। ততক্ষণে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে নেওয়া হয় তাকে পঙ্গু হাসপাতালে। প্রায় একই সময়ে হাতিরঝিলেই রেস করা মোটরসাইকেল উঠে পড়ে আলম ও তার বন্ধুদের ওপর। তাদেরও স্থান হয় পঙ্গু হাসপাতালে।  ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বাস চালকেরা ছিল বেপরোয়া। আগে পৌঁছানোর জন্যে বাসগুলো পাল্লা দিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। তখন সড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেটকার নিয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালনায় মেতে উঠেছিল উঠতি বয়সী কিশোররা। তাদের বেপরোয়া গতিতেও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে ব্যস্ত রাস্তায় যুবকদের আরেকটি গ্রুপের রেসিং খেলার কারণে, আতঙ্ক ছড়ায় নাগরিকদের মধ্যে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকালে খিলগাঁও এলাকায় বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন রিকশারোহী সহিদ হোসেন। নাখালপাড়ার মুদি ব্যবসায়ী সহিদ তার স্ত্রী ও দুই শিমু সন্তান নিয়ে রিকশায় করে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে একটি বাস রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। ছিটকে পড়ে মারাত্মক আহত হন সহিদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই তিনি মারা যান। বাসটি আরও একটি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।  পঙ্গু হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিনে শতাধিক ব্যক্তিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। এদের প্রত্যেকেই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আনা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরাও ছিলেন তৎপর।  জরুরি বিভাগের টিকিট সরবরাহকারী একজন নার্স রেজিস্টার খাতা বের করে দেখিয়ে বলেন, শুধু ঈদের দিনই ১৩৫ জন চিকিৎসার জন্য টিকিট নিয়েছেন। অধিকাংশই রাজধানীতে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। এ ছাড়া মঙ্গলবার টিকিট নিয়েছেন ৩০ জনের বেশি।  হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে ছুটিতে কাজ করেছেন আটজন চিকিৎসক। এ ছাড়া সংযুক্ত ছিলেন আরও দুজন সিনিয়র চিকিৎসক।

লামা (বান্দরবান) : লামায় সোমবার ঈদের দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ চারজন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন। লামা-চকরিয়া সড়কের মিরিঞ্জা পর্যটন এলাকায় বেলা সাড়ে ১০টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আলীকদম নয়াপাড়া এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে জাহেদুল ইসলাম (১০), শফির ছেলে ছরোয়ার হোসেন (১২), পান বাজার এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে আসাদ (১২) ও চকরিয়ার বেহুলা এলাকার মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে মঞ্জুর আলম (৪২)। আহতরা হলেন অপু চাকমা (২৫), সুমিত বড়ুয়া (৩৩), মিজান (৮), দেলোয়ার হোসেন (৪০), আবদুল্লাহ (১৪), ছানা উল্লাহ (৮), নুর আলম (৬০), অনিল চন্দ্র দে (৩৭), হারুণ (৮), ইমন (১২), রিদা ত্রিপুরা (২৫), কপিল উদ্দিন (২৮), ওমর ফারুক (১২), রন্টু বড়ুয়া (৩২), ওসমান ছরোয়ার (১২), রুকন উদ্দিন (২০), তন্ময় (৫০), নজরুল (১৬), রিমা (১৫) ও বাবুল পাল (২৮) প্রমুখ। আহতরা চকরিয়া সরকারি হাসপাতাল, চকরিয়া সিটি হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  লামা থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানান, যাত্রী বোঝাই একটি জিপ গাড়ি (চান্দের গাড়ি, নং ঢাকা-ল ২১২) আলীকদম থেকে চকরিয়া যাচ্ছিল। এতে ৫০ থেকে ৫৬ জন যাত্রী ছিলেন। পথে মিরিঞ্জা পর্যটন এলাকায় এসে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়। পরে দুজন চকরিয়া হাসপাতালে, একজন চকরিয়া সিটি হাসপাতালে ও আরেকজন চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়ার পথে মারা যান। গাড়ির যাত্রী রিমন (১৫) ও কপিল উদ্দিন (১১) বলে, চালক আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তবে ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। এ গাড়িতে ৬০ থেকে ৭০ লিটার দেশীয় চোলাই মদ পাওয়া গেছে।  দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী, আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম, লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।

শ্রীপুর (গাজীপুর) : শ্রীপুরে মোটরসাইকেল-অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় শ্রীপুর উপজেলার ইন্দ্রবপুর (বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সড়ক) এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন পৌর এলাকার কেওয়া দক্ষিণখণ্ড গ্রামের নিজাম উদ্দিন নিজুর ছেলে সৈকত আকরাম (১৪) ও স্থানীয় ফখরুদ্দিন টেক্সটাইল কারখানার বাবুর্চি আক্কাছ আলীর ছেলে আনাছ আলী (১৭)। শ্রীপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলতাব হোসেন জানান, তারা ঈদের আনন্দে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বেড়াতে যাওয়ার সময় ইন্দ্রবপুর এলাকায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে সৈকত আকরাম ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আনাছ আলী মারা যান। সৈকত আকরাম শ্রীপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র এবং আনাছ আলী ২০১৬ সালে একই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে।

রাজশাহী : রাজশাহীতে বাসচাপায় খাবারের হোটেলের মালিক নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে মোহনপুর থানার মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মুকুল হোসেন (৩৮)। তিনি উপজেলার হরিচন্দ্রপাড়া গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে। আহত পুলিশের উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নাম আবদুর রউফ (৩৫)। তিনি মোহনপুর থানায় কর্মরত। মোহনপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফজাল হোসেন জানান, ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসআই আবদুর রউফ ও হোটেল ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন থানার মোড়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। এ সময় দুটি বাস একসঙ্গে নওগাঁর দিক থেকে রাজশাহীর দিকে আসছিল। সামনের বাসটি হঠাৎ করে থানার মোড়ে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু পেছনের বাসটি সামনের দিকে যেতে থাকলে একটি পিকআপ সামনে পড়ে যায়। তখন পিকআপকে বাঁচাতে গিয়ে বাসটি রাস্তা থেকে নিচের দিকে চলে যায়। এদিকে দুর্ঘটনার পর খাজা বাবা পরিবহন নামের ওই বাসটিকে (রাজশাহী-ব-১৭৫৬) আটক করা হয়েছে। তবে এর চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় শরীয়ত উল্লাহ (৩৫) নামে এক গার্মেন্ট কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শরীয়ত উল্লাহ বাড়ি ঢাকার সাভারে। তিনি সাভারের নিউ হরিজন বিডি লিমিটেড নামের একটি গার্মেন্টের নিটিং সেকশনের জেনারেল অপারেটর পদে চাকরি করতেন। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রামেকের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার আবদুর রশিদ জানান, দুপুর ২টার দিকে নগরীর ভদ্রা এলাকায় এম আলী নামে যাত্রীবাহী একটি বাস টার্নিং নেওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শরীয়ত উল্লাহকে চাপা দিয়ে একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শরীয়ত উল্লাহ মারা যান। আর অটোরিকশা চালকসহ চারজন আহত হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা ওই রাস্তায় কিছুক্ষণের জন্য যানচলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মোরেলগঞ্জ : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত ও অপর চারজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি বিশারীঘাটা গ্রামের ইউসুব জোমাদ্দারের ছেলে লিটন জোমাদ্দার (৪০)। গত মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. হায়দার আলী, প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় চারজনকে বহনকারী একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে বিপরীতমুখী আরেক মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লিটন জোমাদ্দার ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং অপর গাড়ির চারজন আরোহী গুরুতর আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহতদের উদ্ধার করে মোরেলগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং অপর আহতদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। থানার ওসি মো. রাশেদুল আলম জানান, নিহত লিটন জোমাদ্দারের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে তার স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে পিক-আপ ভ্যান উল্টে দীলিপ সরকার (৫০) নামে এক কৃষি শ্রমিক নিহত ও অপর ৮ শ্রমিক আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভেন্নাবাড়ীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দীলিপ সরকার একই উপজেলার সাতপাড় এলাকার মৃত বড়দা সরকারের ছেলে। আহত শ্রমিকদের বাড়িও ওই এলাকায়। বৌলতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদুল ইসলাম জানান, সকালে সাতপাড় এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন শ্রমিক পিক-আপ ভ্যান করে টেকেরহাট এলাকায় কাজ করতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ঘটনাস্থলে পিক-আপ ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে দীলিপ সরকার নিহত হন এবং অপর ৮ শ্রমিক গুরুতর আহত হন। আহতদের গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের কুলিয়ারচর উপজেলার বাজরা নামক স্থানে বাসের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিকশার এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। তার নামপরিচয় জানা যায়নি। ভৈরব হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআরটিসির একটি বাস সিএনজি অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ত্রিশালে পিকআপ চাপায় দাদা-নাতি নিহত হয়েছেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কাজির সিমলা নামকস্থানে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাস্তা পারাপারের সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছেন উপজেলার সাখুয়া গ্রামের আবদুস সোবহান (৮০) ও তার নাতি সুমি (১২)। ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি দ্রুতগতির পিকআপ ত্রিশালের কাজির সিমলায় পৌঁছলে রাস্তা পারাপারের সময় দাদা-নাতিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রায় এক ঘণ্টা ঢকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। ত্রিশাল থানার ওসি জাকিউর রহমান জানান, পুলিশ পিকআপটি আটক করলেও চালক পালিয়ে গেছে।

ফরিদপুর : ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় গত রবিবার বিকালে (ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে) সড়ক দুর্ঘটনায় মামা-ভাগিনাসহ চারজন নিহত হয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জিয়াখুলী নামক স্থানে ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা খেলে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ও কাইচাইল ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ঠাণ্ডু জানান, ঢাকা থেকে প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-৬৮৮৩) খুলনা যাচ্ছিল। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জিয়াখুলী নামক স্থানে প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই নগরকান্দা উপজেলার জিয়াখুলী গ্রামের নুরুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে ইমরান তালুকদার (৩৫), ভাঙ্গা উপজেলার নওপাড়া গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে তাইমুন (৭) মারা যায়। এরা এ সময় ব্রিজের পাশে দাঁড়ানো ছিল। প্রাইভেটকারটি তাদের ধাক্কা দিলে তারা ব্রিজের নিচে পানিতে পড়ে যায়। স্থানীয়রা পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে। নিহত ইমরান ও তাইমুন সম্পর্কে মামা-ভাগিনা এবং তাইমুন উপজেলা জিয়াখুলী গ্রামের আবুল কালামের নাতি। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রাইভেটকারের চালক সোহেল মীরকে ফরিদপুর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনিও মারা যান। তার বাড়ি খুলনা জেলায় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী আহত হন।

সিরাজগঞ্জ : শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি বাজারে বাসচাপায় দুজন এবং উল্লাপাড়ার নবগ্রামে সিএনজি থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন উল্লাপাড়া উপজেলার বালশাবাড়ী গ্রামের একই গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৩০) ও সর্বেশ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩২) ও বেরকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউপির লক্ষ্মীপুর গ্রামের জসমত আলীর ছেলে সবুজ (২০)। শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাজা গোলাম কিবরিয়া জানান, মোটরসাইকেলযোগে শরীফুল ও আনোয়ার উল্লাপাড়া থেকে শাহজাদপুর যাওয়ার পথে পাবনা থেকে ঢাকাগামী পাবনা এক্সপ্রেস বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আনোয়ার ও শরীফুল মারা যান। উল্লপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান কৌশিক জানান, উল্লাপাড়ার উধুনিয়া থেকে সিএনজিযোগে বেলকুচি যাওয়ার পথে নবগ্রাম এলাকায় সিএনজির চাকা ফেটে যায়। এ সময় সামনে বসে থাকা সবুজ ছিটকে পড়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

আমতলী (বরগুনা) : আমতলী-তালতলী সড়কের আলীর বন্দর নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মা সুখী বেগম (২২) ও কন্যা আয়শা (৪) নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী রোহান পরিবহন যাত্রী নিয়ে তালতলী বাস কাউন্টার থেকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। আমতলী-তালতলী সড়কের আলীর বন্দর নামক স্থানে এটি পিছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে মাহেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় এবং মাহেন্দ্রোর যাত্রী সুখি বেগম ও কন্যা আয়শা ছিটকে রাস্তায় পড়ে গেলে তারা বাসচাপার শিকার হয়। ঘটনাস্থলেই তারা মারা যায়। নিহত মা ও কন্যার বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর গ্রামে। তার স্বামীর নাম নুরুজ্জামান। মা ও মেয়ে তালতলীর লাউপাড়া গ্রামের বাবা আলতাফ হাওলাদারের বাড়িতে ঈদ উপলক্ষে সোমবার বিকালে বেড়াতে আসেন। গতকাল বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি বুড়িরচর গ্রামে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তালতলী থানার ওসি কমলেশ চন্দ্র হালদার জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং গাড়িটি আটক করা হয়েছে।

ধামরাই : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে খালাতো ভাই রাসেলের (২৫) লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বাড়ি ফেরার পথে গতকাল সকাল ১১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বালিথা ইফাদ অটোস কারখানার সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অপর খালাতো ভাই শফিকুল ইসলাম। এ সময় চালক রহিম রোমান ভুইয়াও মারা যান। নিহত শফিকুল ইসলামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর থানার দুলিজয়পুর গ্রামে। মানিকগঞ্জ সাটুরিয়া গোলড়া হাইওয়ে থানা পুলিশের সার্জেন্ট মনির হোসেন জানান, সকাল ১১টার দিকে ঢাকা থেকে রাসেলের লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বাড়িতে যাচ্ছিল খালাতো ভাই শফুিল ইসলাম, মা সাফিয়া বেগম, চাচা মোস্তফা, বাচ্ছু মিয়া, দুই চাচিসহ সাতজন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বালিথা ইফাদ অটোস কারখানার সামনে গেলে একটি ট্রাক ওভারটেক করতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে অ্যাম্বুলেন্সটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে লাশবাহী গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই শফিকুল ইসলাম ও চালক মারা যান। গুরুতর আহত হন অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সবাই। আহতদের উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত অ্যাম্বুলেন্স চালক রহিম রোমান ভুইয়ার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদরের দৌলতপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুর রউফ ভুইয়া।

গাইবান্ধা : গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চারাবটতলা নামক স্থানে গতকাল রাত দেড়টার দিকে মাইক্রোবাস খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। নিহত স্বপন রোজারিও (৫৭) পাবনার চাটমোহর উপজেলার ভাদড়া গ্রামের মৃত রোমাছ রোজারিওর ছেলে। তিনি দিনাজপুর জেলা সদরের কারিতাস নামক একটি এনজিওতে কর্মরত ছিলেন। গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, দিনাজপুরগামী একটি মাইক্রোবাস বগুড়া- ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক সড়কের চারাবটতলা নামক স্থানে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বপন রোজারিও নিহত হন ।

এ ছাড়া গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চণ্ডীপুর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় রাজা মিয়া (২০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার বোচাগাড়ী গ্রামের মৃত আলাউদ্দীন মিয়ার ছেলে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অপর আরোহী নাসিম মিয়াকে (১৯) আশঙ্কাজনক আহতাবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে নাসিম ও রাজা মিয়া মোটরসাইকেলযোগে পাঁচপীর বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। চণ্ডীপুর এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে রাজা ও নাসিম ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই রাজা মিয়ার মৃত্যু হয়। কঞ্চিবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই এনায়েত কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাটোর : নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। ঈদের রাত ১২টার দিকে শহরের নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ভাটোদারা এলাকায় বগুড়াগামী একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে একজন পথচারীকে চাপা দেয়। পরে একটি মোটরসাইকেল, একটি অটোরিকশা ও একটি ভ্যানকে চাপা দেয়। এতে আটজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে আটজনকে নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তুরিন, নাঈম ও ভুলুর মৃত্যু হয়। অপরদিকে গুরুদাসপুর উপজেলার নয়াবাজারে ঈদের পরের দিন রাতে মাইক্রেবাসের চাপায় কানু নামের এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুইমারা উপজেলার কালাপানি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে মা ও শিশুসহ তিনজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর