বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
রা জ নী তি র হা ল চা ল

শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে

রফিকুল ইসলাম রনি

শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে

সহায়ক সরকারের প্রস্তাব তুলে রাজনীতির মাঠ গরম করার চেষ্টা থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান মেনেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইন অনুযায়ী নিবন্ধন হারাতে পারে। সে কারণে এবার আর ঝুঁকি নেবে না দলটি। নিবন্ধন বাঁচাতেই তাদের নির্বাচনে আসতে হবে। দলীয় সূত্রমতে, পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। বাংলাদেশেও তাই হবে। অনির্বাচিত কারও হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না আওয়ামী লীগ। এমনকি সহায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনায়ও বসবে না আওয়ামী লীগ। বর্তমানে যারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারাই হবেন নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রিসভার সদস্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান হলেও তিনি বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবেন মাত্র। কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন তারা।

দলের একাধিক নীতিনির্ধারকের মতে, বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণের জন্য সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপি সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। বরং আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়ে দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছে তারা। এবার সেই পথে গেলে সরকার কঠোরভাবে দমন করবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এ মেয়াদে দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না। জনগণ যে রায় দেবেন আওয়ামী লীগ তা মেনে নেবে। কিন্তু বিএনপির সহায়ক সরকার দাবি মেনে নেওয়া হবে না। তাদের মতে, বিএনপি মাঠের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখার কৌশল হিসেবে সহায়ক সরকার দাবি করছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান মেনে নিয়েই তারা নির্বাচনে আসবে। এ প্রসঙ্গে গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একই ধরনের কথা বলেছেন। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান থাকবেন এবং বিএনপি সে নির্বাচনে আসবে।  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার থাকবে। এই সরকার নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ভূমিকায় নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এভাবেই নির্বাচন পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই পরবর্তী নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকবে তারা নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবে। এ ছাড়া জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে।  ওবায়দুল কাদেরের সুরেই কথা বলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। নির্বাচনে বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশনকে সাহায্য করাটাই তো সহায়ক। এই সরকারই সেই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অন্য কোনো সরকারের এখানে এসে সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) ডায়েরিতে লিখে রাখুন, আমি নিশ্চিত করে বলছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এখানে অন্য কোনো কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে তো জোর করে আনা যাবে না। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি যে ভুল করেছে, আগামীতে সে ভুল আর করবে না। যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।

 

সর্বশেষ খবর