বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
রা জ নী তি র হা ল চা ল

বিএনপি দেবে সহায়ক সরকারের রূপরেখা

শফিউল আলম দোলন

বিএনপি দেবে সহায়ক সরকারের রূপরেখা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে বিএনপি। বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকে সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান সরকারপ্রধানকে বাইরে রেখে অথবা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন এই সরকার গঠনের কথা বলা হবে এতে। পাশাপাশি সংকট নিরসনে আলোচনার টেবিলে উপস্থাপনের জন্য আরও কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাবও তৈরি করে রাখছে দলটি। যার মধ্যে নির্বাচনকালে  প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করার কথাও বলা হবে। আসন্ন লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পর আগামী আগস্টে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে এ রূপরেখা ঘোষণা করবেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবে থাকবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার যাবতীয় কাজে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। নির্বাচনের সময় প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন এবং অর্থ, শিক্ষা ও তথ্য মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করার কথাও বলা হবে; যাতে যে কোনো সময় নির্বাচনসংশ্লিষ্ট যে কোনো কর্মকর্তাকে যে কোনো জায়গায় বদলি, অপসারণ কিংবা নিয়োগ প্রদান করতে পারে ইসি। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পেশিশক্তিমুক্ত নির্বাচনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনকালে সারা দেশে মোতায়েন করতে পারে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে মিডিয়া ‘ক্যু’ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, ২০টি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন পদ্ধতি এবং সেসব দেশের নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও কার্যক্রমের ধরন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে এই সহায়ক সরকারের একটি খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সার্বিক সহায়তা নিলেও এ প্রস্তাব তৈরির কাজ প্রধানত তত্ত্বাবধান করছেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন তারা।

সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচনী এ রূপরেখায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকারে না রেখে নির্বাচনকালে দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হবে। তবে প্রধানের আসনে অন্য কাকে স্থলাভিষিক্ত করা হবে সে কথা সরাসরি উল্লেখ করা হবে না। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার, বিচারক ও আমলাসহ সর্বজনগ্রহণযোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে পাঁচটি পদে নিয়োগের প্রস্তাব করা হবে। এ পাঁচজনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ থেকে পাঁচজন সদস্যের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত সরকারের ক্যাবিনেট গঠনের প্রস্তাব করা হতে পারে। যারা নির্বাচনী যাবতীয় কার্যক্রমে ‘ওয়াচ-ডগ্’-এর ভূমিকা পালন করবেন এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই সদস্যদের ভূমিকাই হবে মুখ্য। তাদের পরামর্শেই কাজ করতে বাধ্য হবে নির্বাচন কমিশন। এই কাঠামোয় নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধানের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমেও সমঝোতার ভিত্তিতে প্রস্তাব করা হতে পারে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে রেখে এবং তার নির্বাহী ক্ষমতা হ্রাস করে সরকার গঠনের প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে দিতে পারে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধিত বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় সরকারের আদলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব রাখা হতে পারে। দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের পাশাপাশি বিএনপি যেসব বিকল্প প্রস্তাবের কথা চিন্তা করছে সেগুলো একসঙ্গে একই দিনে ঘোষণা করা হবে, নাকি পরবর্তীতে সরকারি দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জন্য রেখে দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের বিকল্প নেই। সেজন্যই বিএনপি এই নির্বাচনী রূপরেখা তৈরি করছে। ম্যাডামের (দলীয় চেয়ারপারসন) লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পরই তা চূড়ান্ত করা হবে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ভাষ্য হলো : কোনো একটি বিশেষ দলকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সংবিধান নয়। বিএনপি যদি সংবিধান না সংশোধন করত, তাহলে একদলীয় বাকশাল প্রথাই থেকে যেত। আর যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হতো, আওয়ামী লীগও আর নব্বইয়ের পর ক্ষমতায় আসত না। কাজেই শুধু সংবিধান নয়, জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনার টেবিলে সমঝোতার ওপরই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তিনি সংবিধানের ভিতরে থেকেও নির্বাচনকালীন এই সহায়ক সরকার গঠন সম্ভব বলে উল্লেখ করেন। দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুলাইয়ের মাঝামাঝি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে তার চোখের চিকিৎসা করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে তার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সপরিবারে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটানো ছাড়াও তারেক রহমানের সঙ্গে নির্বাচন ও নির্বাচনী এই রূপরেখা নিয়ে বিশদ আলোচনা করবেন।

এ বিষয়ে বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে বিএনপি তার ভিশন-২০৩০ সামনে রেখেই এগোচ্ছে। সেখানে তারা সুচিন্তা, সুশাসন ও সুসরকারের কথা বলেছে। শান্তিপূর্ণ ও শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যেজন্য কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দিয়ে সবকিছু সহ্য করে মহাসচিব মির্জা আলমগীরসহ দলীয় নেতাদের ওপর হামলার পরও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দলটি।’

সর্বশেষ খবর