বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে : খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। এ সময় সেনা মোতায়েন রাখতে হবে। দেশ বাঁচাতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারপ্রধানের উদ্দেশ্যে বলেন, ১০ বছর তো অনেক দুর্নীতি, লুটপাট করেছেন, গুম-খুন করেছেন।

এবার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের চিন্তা মাথা থেকে মুছে ফেলুন। আপনি ক্ষমতায় থাকতে নির্বাচন হবে— আর সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এটি কী ভাবা যায়!  গত সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দল ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। কূটনীতিকদের মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট, ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক, ভ্যাটিকেনের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি, ইইউর রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদনসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর যথাক্রমে শেরেবাংলা নগর ও বনানীস্থ সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বেগম জিয়া তার গুলশানের বাসভবনে ফিরে যান। বেগম জিয়া বলেন, দেশে এখন দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে হাওর ও পাহাড়ি এলাকায় খাবার এবং সরকারি সহায়তার জন্য মানুষ হাহাকার করছে। সরকারের দুঃশাসন, নিপীড়ন এবং ব্যর্থতার জন্য দেশের মানুষ এবার আনন্দ নিয়ে ঈদ উদ্?যাপন করতে পারেনি। তিনি বলেন, সাধারণত বিপুল উৎসবের মধ্য দিয়ে সব সময় ঈদ উদ্যাপিত হয়। কিন্তু এবার দেশে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বৃদ্ধিসহ সড়ক দুর্ঘটনা ও যাত্রাপথে মানুষের দুর্ভোগের কারণে কারও মনে কোনো আনন্দ নেই। উৎসবমুখর পরিবেশ এবার ছিল না। বিএনপিপ্রধান বলেন, গত ১০ বছরে এ সরকার দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। দেশের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। তারা ভালো সেবা ও সুশাসন চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সবদিক থেকেই ব্যর্থ। ভবিষ্যতে এ সরকার মানুষের জন্য ভালো কিছু দিতে পারবে না। সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব বর্ণনা করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে দেশের জনগণ ভোট দিতে পারবে না। এজন্য তারা ভোটকেন্দ্রে যাবে না। কাজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে দল নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। রাঙামাটির পথে বিএনপির মহাসচিবের গাড়িতে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নেতাদের ওপর এমন হামলার পর আপনারা কী প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো ভালো নির্বাচন হতে পারে? খালেদা জিয়া সরকারি দলের লোকদের দুর্নীতি-লুটপাটের সমালোচনা করে বলেন, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা দিন দিন ধনী হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। দিন দিন মানুষের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। আমি পত্রপত্রিকার খবরে পড়েছি, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ করেছেন এরা দেশের বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করছে। আর সাধারণ মানুষ ঈদে নতুন জামাকাপড় কিনতে পারছে না। দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। দেশ বাঁচাতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারপ্রধানের উদ্দেশ্যে বলেন, ১০ বছর তো অনেক দুর্নীতি, লুটপাট করেছেন, গুম-খুন করেছেন। এবার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের চিন্তা মাথা থেকে মুছে ফেলুন। আপনি ক্ষমতায় থাকতে নির্বাচন হবে আর সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এটি কী ভাবা যায়! গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের মানুষও এখন পরিবর্তন চায়। এই সরকারের কাছ থেকে জনগণ আর ভালো কিছু আশা করে না। কাজেই দেশ বাঁচাতে এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, এবারের বাজেট হলো সবচেয়ে খারাপ বাজেট। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই অর্থমন্ত্রীকে কীভাবে গালাগালি করেছে, আপনারা তা দেখেছেন। কিন্তু এই বাজেটের জন্য কী শুধু অর্থমন্ত্রী দায়ী? তাকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই সেটি তৈরি হয়েছে। আদেশ-নির্দেশ সবকিছুই তো এক জায়গা থেকে হয়, আর তিনিও (অর্থমন্ত্রী) সেভাবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সদরুল আমিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজে সভাপতি আবদুল হাই শিকদারসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ ও ২০-দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা এতে অংশ নেন।

আজ আদালতে যাবেন খালেদা জিয়া : ঈদুল ফিতরের পর তিন দিনের মাথায় আজ (বৃহস্পতিবার) হাজিরা দিতে আবারও বিশেষ আদালতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে আজ। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে যাবেন খালেদা জিয়া। সকাল ১০টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে বের হওয়ার কথা রয়েছে তার।

এর আগে গত ২২ জুন (বৃহস্পতিবার) খালেদা জিয়া ১১টা ৩৫ মিনিটে আদালতে উপস্থিত হন। সাড়ে ১২টার দিকে তিনি আদালত চত্বর ত্যাগ করেন। এদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আত্মপক্ষ সমর্থন এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে অসমাপ্ত বক্তব্য দেওয়ার দিন ধার্য ছিল।

সর্বশেষ খবর