বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

তুরস্কে আটকা দুই হাজার বাংলাদেশি

ধরপাকড় চলছেই মালয়েশিয়ায়

কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও মালয়েশিয়া প্রতিনিধি

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার সময় তুরস্কে আটকা পড়েছেন প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি। তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসকে উদ্ধৃত করে গতকাল এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকীও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় চলছেই। তবে সেখান থেকে অবৈধ কর্মীদের জন্য নতুন করে ‘ফ্রি প্লাস ওয়ান’ পদ্ধতিতে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে মালয়েশীয় সরকার। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ শ্রমিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে গতকাল নতুন এ পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দিয়েছে। ‘ফ্রি প্লাস ওয়ান’ পদ্ধতিতে যে কোনো অবৈধ বিদেশি শ্রমিক ৪০০ রিংগিত জরিমানা এবং কুয়ালালামপুর-ঢাকা বিমানের টিকিট নিয়ে পুত্রাজায়ার ইমিগ্রেশনে গেলেই তাকে দেশে ফেরার জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। ইমিগ্রেশন বিভাগ আরও জানায়, ‘যারা মনে করছেন বৈধ হওয়ার আবার সুযোগ পাবেন তাদের বলছি, বৈধ হওয়ার সময়সীমা নতুন করে বাড়ানো হবে না।’ এদিকে অবৈধ বিদেশি কর্মী ধরপাকড় গতকালও অব্যাহত ছিল। তবে এ ধরপাকড় নিয়ে নিয়োগকর্তারাও উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। গ্রেফতারের ভয়ে বিপুলসংখ্যক বৈধ ও অবৈধ কর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন। কারখানার মালিকরা শঙ্কিত যে, ওইসব শ্রমিক আর কাজে আসবেন না, যতক্ষণ না ধরপাকড় বন্ধ হয়। ফলে নির্মাণ ও এসএমই খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাস্টার্স বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট ফো চেক লি বলেন, ‘ধরপাকড়ের কারণে কনস্ট্রাকশন শ্রমিকরা কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এটা উৎপাদনে বাধা। এতে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কনস্ট্রাকশন খাতের ক্ষতি হচ্ছে। সরকার যখন ই-কার্ড করার মেয়াদ বাড়াল না, তখন আমরা সব ঠিকাদারকে বলেছি দ্রুত রি-হায়ারিং সম্পন্ন করতে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সদস্যরা রি-হায়ারিং করতে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। রেইডের সময় কাজ বন্ধ করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মারা যাব। এমনিতে দেরিতে ডেলিভারি দেওয়ার কারণে ক্ষতির মধ্যে আছি। এখন আরও দেরি হবে এবং ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।’ এদিকে ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী আশ্বস্ত করে বলেছেন, বৈধ বিদেশি কর্মীদের ভয়ের কিছু নেই। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে তিনি বলেন, ‘বৈধ কর্মীদের ভয়ের কিছু নেই। কেন তারা ভয় পাচ্ছেন!’ কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, ধরপাকড়ের সময় বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে সবাইকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বৈধকরণ ই-কার্ড প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হওয়ার পর বিদ্যমান অবৈধ শ্রমিক ধরতে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। ৩০ জুন মাঝরাত থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫ জন অবৈধ বিদেশি শ্রমিককে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। পাশাপাশি অবৈধ শ্রমিক রাখার অপরাধে ১৬ জন মালিককেও আটক করা হয়েছে। এই সাঁড়াশি অভিযানের ফলে বৈধ-অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই অভিযানের ভয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আতঙ্কিত না হতে বলল বাংলাদেশ হাইকমিশন : মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের রি-হায়ারিংয়ের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. সায়েদুল ইসলাম। সোমবার দুপুরে মিশনের হলরুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ আহ্বান জানান। সায়েদুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সফরের সময় দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধতা প্রদানের জন্য মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অবৈধ কর্মীদের বৈধতা প্রদানের লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকার ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রি-হায়ারিং কর্মসূচি চালু করে। প্রথমে এর মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে মালয়েশিয়া সরকার তা ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে। পরে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রচেষ্টার ফলে ২০১৭ সালের শুরুতেই মালয়েশিয়া সরকার রি-হায়ারিং কর্মসূচির মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের সংখ্যা সর্বাধিক। তিনি বলেন, অবৈধ যেসব অভিবাসী বৈধ বন্দর দিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেননি, তাদের রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে অনেক বাংলাদেশি এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। সে কারণে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনে আলোচনা হয়। ওই আলোচনা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় চলমান রি-হায়ারিং কর্মসূচির সহায়ক হিসেবে অবৈধ শ্রমিকদের সাময়িক বৈধতা হিসেবে এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) করার সুযোগ দিয়েছিল মালয়েশীয় সরকার। হাইকমিশন কর্মকর্তা জানান, ই-কার্ড কর্মসূচির মেয়াদ ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ই-কার্ড কর্মসূচিতে রেজিস্টার হলে দীর্ঘ মেয়াদে বৈধতাপ্রাপ্তির জন্য প্রত্যেক কর্মীকে অবশ্যই রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ই-কার্ড ও রি-হায়ারিং কর্মসূচি সফল করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। হাইকমিশন থেকে শ্রমিকদের সচেতন করতে প্রচারপত্র বিলি করা হয়। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হয়। কমিউনিটি সভা করে কর্মীদের সচেতন, অবহিতকরণ ও উদ্বুদ্ধ করা হয়। নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভাসমূহে তাদের আওতাধীন সব অবৈধ কর্মীকে বৈধতা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার বিদেশি অভিবাসী ই-কার্ড সংগ্রহ করেছেন, যার মেয়াদ থাকবে ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ পর্যন্ত। ই-কার্ডপ্রাপ্ত অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা সর্বাধিক। ই-কার্ড প্রাপ্তির পর বিদেশি কর্মীরা স্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার লক্ষ্যে রি-হায়ারিং প্রোগ্রামের আওতায় চলে আসবেন। ই-কার্ড নেওয়ার সময়সীমা শেষ হলেও অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সময়সীমা শেষ হয়নি। যারা এখনো বৈধ হতে পারেননি তারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধ হতে পারবেন। কাউন্সিলর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে মালয়েশীয় সরকার ই-কার্ডের সুযোগ দিয়েছিল। ই-কার্ড নেওয়া কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগও নিয়েছেন সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক। এর পরও যারা এখনো অবৈধ হিসেবে অবস্থান করছেন, তাদের আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে যেসব বাংলাদেশি ই-কার্ড পেয়েছেন অথবা রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে রেজিস্টার্ড হয়েছেন, এদের মধ্যে যাদের পাসপোর্ট নেই, তাদের দ্রুত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বৈধতা অর্জনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর