বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফিনল্যান্ডে মানবেতর জীবনে বাংলাদেশি শরণার্থীরা

প্রতিদিন ডেস্ক

মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত পেরিয়ে ফিনল্যান্ডে আসা বাংলাদেশির অধিকাংশের পরিণতি সুখকর নয়। হাতে গোনা কয়েকজন রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেও বাকিদের জুটেছে ক্যাম্পের সীমাবদ্ধ জীবন। আবার অনেকে কাজ করার সুযোগ পেলেও উপার্জন প্রয়োজনের চেয়ে কম। বাংলাদেশ থেকে আগতরা যে কাজ করেন তা মূলত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর পত্রিকা বিলির। কিছু বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা ফুড ফর ওয়ার্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আছে নানামুখী মানসিক অত্যাচারের কাহিনীও।

বাংলাদেশ থেকে আগত কয়েকজন শরণার্থী এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তাদের বেশির ভাগ ইউরোপ আসেন ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও রাশিয়া হয়ে। অনেকে ইরান-তুরস্ক হয়ে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৮ হাজার ৯৩৭ জন ইউরোপে পাচার হয়েছেন। অনেক শরণার্থী মাঝসমুদ্রে নৌকা ডুবে, কেউ অত্যাচারে অথবা কেউ খাবারের অভাবে মারা গেছেন বলে ধারণা করা যায়। জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্নে জীবনকে তুচ্ছ করে দুর্গম সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসব বাংলাদেশি ইউরোপে আসেন। পাচারের শিকার বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, তারা বেশির ভাগই বয়স (আন্ডার এজ) কম দেখান কিংবা আইসিস অধ্যুষিত কোনো দেশের নাগরিক বলে প্রমাণ করতে চান অথবা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

এসব বিষয় মানবাধিকারের সঙ্গে জড়িত বলে মামলা ফয়সালা হতে দীর্ঘ সময় পার হয়। ফলে এই সময়ে তারা কিছু কাজ করে টাকাপয়সা রোজগার করতে পারলেও শেষ পর্যন্ত মামলার ফল তাদের বিপক্ষে যায়। বেশির ভাগের কপালে জোটে ডিপোর্টেশন। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শরণার্থী দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তালিকায় সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক ও পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে চার কোটি লোক শরণার্থী হচ্ছে। তবে এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, পৃথিবীব্যাপী। সাম্প্রতিক সময়ে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকেও ইউরোপের নানা দেশে, বিশেষ করে গ্রিস, জার্মানি, ইতালির উদ্দেশে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়াও এ সমস্যা মোকাবিলা করছে। ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশ বিশেষ করে মেক্সিকো থেকে স্থলপথে দুর্গম এলাকা পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেকে। এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া— সব মহাদেশকেই গ্রাস করছে এই মানব পাচার সমস্যা। কিছু দিন আগে থাইল্যান্ডের গহিন বনে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কবরের সন্ধান পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর