শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশ এগিয়ে নিতে আন্তরিক হতে হবে আমলাদের : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশ এগিয়ে নিতে আন্তরিক হতে হবে আমলাদের : প্রধানমন্ত্রী

সকল মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর হাতে চুক্তি স্বাক্ষরের ফাইল তুলে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি থাকা উচিত। দেশের আমলাতন্ত্রকেও লক্ষ্য অর্জনে আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। খবর বাসস ও অন্যান্য সূত্রের।

গতকাল সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরের সচিবদের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০১৭-১৮ (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে ৫১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি কাজের গতি বাড়াতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কয়েক অর্থবছর ধরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি—এপিএ করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রথম এ চুক্তি করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৫১টি মন্ত্রণালয়, দফতর ও অধীন সংস্থা চতুর্থবারের মতো এ চুক্তি করে। এ ছাড়া দফতর ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে তৃণমূল প্রশাসনেরও কর্মসম্পাদন চুক্তি হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সচিবদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা তখনই দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব, যখন আপনারা জনগণের সেবক হিসেবে ঠিকভাবে কাজ করবেন। বাজেট আমরা দিয়েছি, বিশাল বাজেট। এ বাজেট এবং আমাদের যে উন্নয়ন প্রকল্প... কাজেই কোনোরকম কালক্ষেপণ না করে এটাও যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়।’ তিনি বলেন, ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি হচ্ছে সিভিল প্রশাসনের একটি অভ্যন্তরীণ কর্মকৌশল। এটি দেশের জনগণের কল্যাণে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নিয়ে যেতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য দাফতরিক দায়বদ্ধতার স্মারক। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।’ বাজেট পাস হওয়ার পর পরই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এর ফলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আরও বেশি সময় হাতে পাওয়া যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের বড় লক্ষ্য আয়বৈষম্য দূর করা। ধনী ও গরিবের বৈষম্য দূর করা। উন্নয়নটা শুধু শহরে হবে না, উন্নয়নটা একেবারে গ্রাম থেকে উঠে আসবে। গ্রামের সাধারণ মানুষ যাতে সবরকম নাগরিক সুবিধা পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগই কিন্তু বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল একটাই— আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সেজন্য বেসরকারি খাতকে আমরা আরও বেশি সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু সরকারকেও এখানে থাকতে হবে। কারণ, কোনো ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাচারিতা হোক, আমরা তা চাই না।’ জনগণের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে আমরা সংসদ সদস্য হিসেবে যখন নির্বাচিত হয়ে আসি, আমাদেরও দায়বদ্ধতা থাকে সংসদের কাছে। আর সংসদ সদস্যদের ভোটেই পার্লামেন্টারি কমিটির নেতা নির্বাচিত হন। যিনি হন প্রধানমন্ত্রী। এখানে ক্যাবিনেট সদস্যসহ সবাই সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। আর সংসদ সদস্যরা দায়বদ্ধ জনগণের কাছে।’ তিনি বলেন, ‘যখন নির্বাচন হবে আমরা কিন্তু সেই জনগণের কাছেই যাব। আমরা নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যাই না। বরং আরও ভালো কী করা যায়, সেটাই চিন্তা করি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেবে, তা কখনো কেউ ভাবতেই পারেনি। এ সংখ্যাটা শুনলেই মাথা গরম হয়ে যাওয়ার কথা যে, এত বড় বাজেট আমরা দিতে পারব কীভাবে। কিন্তু আমরা এটা দিতে পেরেছি। এখন এটা আমাদের বাস্তবায়নের সময়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হচ্ছেন আপনারা, সরকারি কর্মচারীরা। এখানে কিন্তু কর্মচারী বলা আছে। সে ক্ষেত্রে আপনাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। দায়বদ্ধতা রয়েছে সংবিধানের কাছে, দায়বদ্ধতা রয়েছে জনগণের কাছে। কারণ, জনগণ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যা কামাই করে তা দিয়েই আজকে সবার বেতন-ভাতা। জনগণের শ্রমেরই এই ফসল।’ তিনি মাঠপর্যায়েও কর্মসম্পাদন চুক্তিগুলো সেরে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবদের পরামর্শ দেন। স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধুর দক্ষ নেতৃত্বে শূন্য অবস্থা থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার মানুষকে নিয়ে চিন্তা করে। একজন মানুষও ঘরহারা থাকবে না। একজন মানুষও অভুক্ত থাকবে না। প্রতিটি ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখবে।’ কর্মসম্পাদন চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটা অত্যন্ত কার্যকর একটা পদ্ধতি, যা আমাদের সত্যিই সুফল দিচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর