শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বনানীর ‘ধর্ষক’ ইভান নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বনানীর ‘ধর্ষক’ ইভান নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার

রাজধানীর বনানীতে জন্মদিনের কথা বলে ডেকে এনে এক তরুণীর ধর্ষণকারী  বাহাউদ্দিন ইভান ধরা পড়েছেন। গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে র‍্যাব তাকে গ্রেফতার করে। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ইভানের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার দুপুরে এক তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ এনে ইভানকে আসামি করে বনানী থানায় একটি মামলা করেন। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগে অভিযোগকারী তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ‘জন্মদিনের দাওয়াতে’ ডেকে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণ করা হয় বলে ওই তরুণী অভিযোগ করেন। ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ‘পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। দুপুরে মেয়েটি আমাদের কাছে এসেছে। ধর্ষণ হয়েছে কিনা তা জানার জন্য রেডিওলজি, ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য হাইভেজনাল সফট এবং তাকে নেশা-জাতীয় কোনো দ্রব্য খাওয়ানো হয়েছিল কিনা সেজন্য রক্ত, ইউরিন সংগ্রহ করা হয়েছে। সাধারণত ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। মেয়েটি যেহেতু এ সময়ের আগেই এসেছে, তাই তার ধর্ষণ হয়ে থাকলে তা জানা যাবে।’ স্থানীয়রা বলছেন, ইভান বনানীর ২ নম্বর রোডের ৫/এ ন্যাম ভিলেজের বি-১ ফ্ল্যাটে থাকেন। তার বাবা বোরহান উদ্দিন বেলাল একজন ব্যবসায়ী। বনানীতে তার বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। বাবার সঙ্গে ইভানও তার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। ইভানের স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইভান বড়। মা-বাবাসহ তারা সবাই একসঙ্গে থাকতেন। ন্যাম ভিলেজের ওই ভবনের পাশের ২৯৮ নম্বর নাজভীন ভিলা (ইতি) ইভানদের নিজেদের বাড়ি। ছয় মাস আগে তারা ন্যাম ভিলেজের বাসায় ভাড়া ওঠেন। ইভান সব সময় বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। মাদকসেবী ছিলেন। সব সময় নিশান জিপ ও দামি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতেন। মাদকাসক্ত ইভানের আচরণ ও কথাবার্তা ছিল উদ্ভট প্রকৃতির। বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) বোরহান উদ্দিন রানা জানান, মঙ্গলবার রাতে ইভান তার জন্মদিনের দাওয়াতের কথা বলে পূর্বপরিচিত ও অভিনেত্রী ওই তরুণীকে বাসায় ডাকেন। রাত দেড়টার দিকে তিনি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। তখন ইভান ও তার মা ছাড়া বাসায় কেউ ছিলেন না। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ইভান তাকে বাসা থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন বনানী থানার এসআই সুলতানা আক্তার। এ বিষয়ে ন্যাম ভিলেজের দারোয়ান মাসুদ বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে ইভান বাসার নিচে আসেন। এ সময় এক তরুণীও রিকশায় বাসার সামনে আসেন। সে সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। আমাকে ইভান বলেন, “দ্রুত গেট খোল। আমার বন্ধু এসেছে, ক্লাসমেট এসেছে।” ইভান ওই তরুণীকে নিয়ে ওপরে চলে যান। রাত ৪টার দিকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনতে পাই। দেখি ইভান ওই তরুণীকে ধাক্কা দিতে দিতে নিচে নিয়ে আসছেন। আর তরুণী বলছেন, “আমি যাব না। এত রাতে আমি কোথায় যাব।” তখন দুজনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ইভান আমাকে বলেন, “গেট খুলে ওকে বের করে দে।” পরে আমি গেট খুলে তরুণীকে বের করে দিয়ে আবার গেট লাগিয়ে দিই। ইভান ওপরে চলে যান। আর ওই তরুণীকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল।’ ধর্ষণের শিকার তরুণী অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৯টায় ইভান ফোন করে জন্মদিনের দাওয়াতের কথা বলে বাসায় ডেকে নেয়। রাত সাড়ে ১০টায় ইভানের বাসায় পৌঁছাই। কিন্তু ঘরে কাউকে দেখতে পাইনি। বাসায় আসতে চাইলেও সে আমাকে আসতে দেয়নি। পরে রাতের খাবার এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য আমাকে জোর করে খাওয়ানো হয়। রাত দেড়টায় জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। রাত সাড়ে ৩টায় আমার ব্যাগ রেখে আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়।’ ইভানের সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয়। তাদের বন্ধুত্ব ১১ মাস। গেল চার মাস তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইভান এর আগেও তাকে ধর্ষণ করেছেন। এগুলো তিনি ভিডিও করেছেন এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখিয়েছেন। পুলিশের গুলশান বিভাগের এসি রফিকুল ইসলাম জানান, ‘ইভানকে হাতে পাওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ, শাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আজাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শাফাতসহ সব আসামি বর্তমানে কারাগারে। এ মামলায় ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর