শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আমি ব্যর্থ হলে ৪০০ নারী বিচারক হতেন না

নাজমুন আরা সুলতানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমি ব্যর্থ হলে ৪০০ নারী বিচারক হতেন না

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেছেন, প্রথম নারী বিচারক হিসেবে আমি ব্যর্থ হলে হয়তো আজ বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ নারী বিচারক হতেন না। তিনি বলেন, জেনে-বুঝে বা অমনোযোগী হয়ে কোনো ভুল বিচার করিনি। আমি আমার সব জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে, সবটুকু মনোযোগ দিয়ে, সমগ্র একাগ্রতা দিয়ে বিচারকাজ করেছি। আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিজের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বিদায়ী সংবর্ধনার জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচারকক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দেশের বিচার বিভাগে প্রথম নারী বিচারক তিনি। সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগেও তিনি প্রথম নারী বিচারপতি। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আমি আমার সুদীর্ঘ বিচারিক জীবনে কখনোই জেনে-বুঝে, অবহেলা করে বা অমনোযোগী হয়ে কোনো ভুল বা অন্যায় বিচার করিনি। আমার কোনো বিচার হয়তো ভুল হয়ে গেছে। আপিলে গিয়ে হয়তো তা সংশোধিত হয়েছে। তিনি বলেন, ৪২ বছরের বিচারিক জীবন আজ শেষ হলো। বিচার করার কঠিন কাজ ও সীমাবদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হওয়ার আগ্রহ ছিল আমার। কিন্তু যতই বিদায়ের দিনটি এগিয়ে আসছিল, আগ্রহ কমে আসছিল। আজকের ক্ষণটিতে এই বিচারাঙ্গন থেকে বিদায় নিতে, আপনাদের সবাইকে ছেড়ে যেতে আমার কষ্ট হচ্ছে। নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আল্লাহ আমাকে এ দেশের প্রথম নারী বিচারক বানিয়েছেন। আমার বিচারক হওয়ার  পেছনে আমার বাবার ইচ্ছা ও মায়ের প্রেরণা বড় ভূমিকা  রেখেছে। বাবার ইচ্ছা ছিল, সন্তানদের মধ্যে একজন ব্যারিস্টার হবে। কিন্তু বিধবা মায়ের পক্ষে কোনো সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ানো সম্ভব হয়নি। ভেবেছিলাম আমার আইন পড়ার মাধ্যমে বাবার ইচ্ছা কিছুটা পূরণ হবে। তিনি বলেন, বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের প্রথম নারী বিচারক হই। ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে খুলনায় মুনসেফ হিসেবে যোগ দেই। তখন কেউ কেউ স্বাগত জানিয়েছিলেন। অনেকে আবার নাক সিটকেছিলেন। কারও কারও কাছ  থেকে অবজ্ঞা পেলেও অনেকের কাছ থেকে ভালো আচরণ  পেয়েছিলাম। ওই উৎসাহ ও সাহায্য না পেলে হয়তো বিচারক হিসেবে টিকে থাকাই সম্ভব হতো না। নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, দেশের নারী বিচারকরা অনেক সময় বেশ কিছু অসুবিধা-বিপদের সম্মুখীন হন। এগুলো দূর করার দায়িত্বে ঊর্ধ্বতন যে পুরুষ বিচারক আছেন, তারা অনেক সময় এই অসুবিধা-বিপদ বুঝতেই পারেন না। বুঝতে চান না। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল বিভাগের অন্য ছয় বিচারপতি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বিদায়ী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এ সময় আইনজীবীদের উপস্থিতিতে বিচারকক্ষ ছিল পরিপূর্ণ।

সর্বশেষ খবর