রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
আই ক্ল্যাডসের গোলটেবিল বৈঠকে অভিমত

নির্বাচনে চাই সব দলের অংশগ্রহণ যুদ্ধাপরাধী প্রার্থী হতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনে চাই সব দলের অংশগ্রহণ যুদ্ধাপরাধী প্রার্থী হতে পারবে না

রাজধানীতে গতকাল ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকদের একাংশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় সেদিকে নির্বাচন কমিশনসহ সবাইকে মনোযোগ দিতে হবে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে যেন যুদ্ধাপরাধী, তাদের সহায়তাকারী, সহযোগী, আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা অংশ না নিতে পারে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনকে শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। বক্তাদের মতে, বাংলাদেশকে যারা স্বীকার করে না, বাংলাদেশের অস্তিত্ব মানে না, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে, যারা দেশবিরোধী তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো অধিকার নেই।

রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজক ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আই ক্ল্যাডস)। আই ক্ল্যাডসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমিরের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুর রশীদ। আলোচনায় অংশ নেন আই ক্ল্যাডসের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, দৈনিক নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ড. শওকত আরা হোসেন, অধ্যাপক জিনাত হুদা, এফবিসিসিআইর পরিচালক শমী কায়সার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, ডা. নুজহাত চৌধুরী, ফেমা’র প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর ও ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন ও সংস্কৃতিকর্মী রোকেয়া প্রাচী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচনকে বানচাল করতে নানা ষড়যন্ত্র হবে। সেটা লন্ডনে হতে পারে, পাকিস্তানে হতে পারে। অন্য কোনো দেশে হতে পারে। দেশের ভিতরেও হতে পারে। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।  বৈঠকে অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজনীতির ব্যাকরণ দারুণভাবে অনুপস্থিত। ব্যাকরণসম্মত রাজনীতি থাকলে আজ এ আলোচনার প্রয়োজন হতো না। ব্যাকরণসম্মত রাজনীতি থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন অপরিহার্য। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন হতে হবে অবশ্যই সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে।

তার মতে, নির্বাচনে প্রাথমিক কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতে হবে। চূড়ান্ত বিকল্প বা অনিবার্য বিকল্প হলে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা যেতে পারে। অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও ক্রেডিবল করতে হলে বিএনপিসহ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাদের অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু জামায়াত যদি ভিন্ন নামে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আমরা কি সেটা মেনে নেব? রাষ্ট্র কি মেনে নেবে? নির্বাচন কমিশন কি মেনে নেবে? এটা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের জনসমর্থন রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে, রেললাইন উপড়ে ফেলে, রাস্তাঘাট কেটে ফেলে- পৃথিবীর কোন দেশ আছে যেখানে এরকম কর্মকাণ্ডের পর তাদের রাজনৈতিক অধিকার দেবে?

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটা উৎসব। হইচই না করে একটা ক্রেডিবল নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন যেন গণতান্ত্রিক পরিবেশে হয়। তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। নির্বাচন কমিশন চাইলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আনিসুল হক বলেন, ব্যবসার স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, বিদেশি বিনিয়োগের স্বার্থে একটা অর্থবহ ও জবাবদিহির নির্বাচন প্রয়োজন।

নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভালো একটা নির্বাচন আমাদের দরকার। অগণতান্ত্রিক শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য ঐকমত্য দরকার। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সংবিধান তাদের সে দায়িত্ব দিয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে ২৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করে কমিশন তাদের ভূমিকা দেখিয়েছিল। আগামী নির্বাচনে ইলেকশন কমিশনের ভূমিকাই বলে দেবে ইলেকশন কেমন হবে; সব দলের অংশগ্রহণে হবে না কীভাবে হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হবে। তবে কয়েকটা জায়গায় কোনো আপস চলবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের পতাকা, সংবিধান এসব ক্ষেত্রে কোনো আপস হবে না। তিনি বলেন, এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল। যেগুলোতে নিজেদের বক্তব্য ধরে রাখার, দৃশ্য ধরে রাখার ক্ষমতা থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া এতটাই শক্তিশালী যে  নির্বাচন নিরপেক্ষ না হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অবশ্যই জরুরি। তার চেয়েও জরুরি যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের দায়িত্বশীল হওয়া। কোনোরকম নৈরাজ্য করা যাবে না। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্ত অঙ্গীকারনামা করতে হবে। ধর্মের ব্যবহারের বিষয়েও কমিশনকে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।

শাহরিয়ার কবীর বলেন, নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। আল্লাহকে রাজনীতিতে টেনে আনা যাবে না।

মুনিরা খান বলেন, নির্বাচনে যে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে তা নয়, এর সঙ্গে ভোটার, জনগণ, পর্যবেক্ষক, সিভিল সোসাইটি সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রোকেয়া কবীর নারীদের প্রত্যেক পার্টিতে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দানের ওপর জোর দেন।

সর্বশেষ খবর