রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্ষমতায় থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করবে বলে আশাবাদ      ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের নেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের আরও এক টার্ম ক্ষমতায় আসা দরকার। আমি চাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করবে।’ গতকাল বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ১ ঘণ্টার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লক্ষ্য উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এর বাইরে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ এগিয়ে যায়, উন্নয়ন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে যায়। লুটপাট আর দুর্নীতি ছাড়া তারা জাতিকে কিছুই দিতে পারে না। দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা আগামীতে কাকে চায়। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য সরকারেরও ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে যেসব কাজ হাতে নিয়েছি সেসব বাস্তবায়ন করেছি। যেসব মেগা প্রকল্প হাতে রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে আরও এক টার্ম ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন।’ আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে মন্তব্য করে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ ভোটের মালিক, জনগণ ভোট দেবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব— এ স্লোগান কিন্তু আমরাই শুরু করেছি। আমরা সব সময় নির্বাচনে বিশ্বাসী।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে হবে। বিএনপি দেশ শাসন করতে নয়; ভোগ করতে, লুটপাট করতে ক্ষমতায় আসে— এটাও জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।’

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন এলে তারা বিভিন্ন রকম টালবাহানা শুরু করে। এসবও জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের সরকার হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া ভবন তৈরি করেনি। আমরা ইশতেহার হাতে নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করি। এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে ২০১৯ সালে আরও বড় আকারে বাজেট দেওয়া হবে।’

প্রধানমন্ত্রী তার সূচনা বক্তব্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সারা দেশে দুঃশাসন, নিপীড়ন-নির্যাতন ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেকেসহ অনেক বড় বুদ্ধিজীবীও এটা ভুলে যান। আওয়ামী লীগ উদার বলে ক্ষমাও করে। তবে ক্ষমা করা যায়, অতীত ভুলে যাওয়া যায় না। ভুলে যাওয়া উচিতও নয় বলেই আমি মনে করি। বরং অতীত থেকেই আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির জন্ম-ইতিহাসসহ তাদের অতীত দুঃশাসন, নিপীড়ন-নির্যাতন ও দুর্নীতি-লুটপাটের ঘটনা এ দেশের মানুষকে বার বার জানানো উচিত। অতীতকে একবার ভুলে গেলে সামনে এগোনো যায় না।’

যে কোনো মূল্যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনে বিশ্বাসী। আর জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত ও নির্বাচন স্বচ্ছ করতে যত ধরনের পদক্ষেপ তা সব আওয়ামী লীগই নিয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আওয়ামী লীগই সব সময় লড়াই-সংগ্রাম করেছে। কিন্তু এ দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা সর্বপ্রথম ধ্বংস করেছে জেনারেল জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়ার সময় ভোটারবিহীন ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন, মাগুরা উপনির্বাচনের কথাও দেশের জনগণ কোনো দিন ভুলবে না।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচনে দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়া জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। জনগণের সেই সাংবিধানিক অধিকার অব্যাহত থাকবে। দেশের জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে।’ তিনি বলেন, ‘কী পেলাম তা বড় কথা নয়, দেশের জনগণকে কী দিতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম তা-ই আমার কাছে সবচেয়ে বড় কথা। আজ এখানে (প্রধানমন্ত্রী) আছি, না থাকলে থাকব না। আমি হাঁটতেও পারি, রিকশা-ভ্যানেও চলতে পারি। যখন যেভাবে চলতে হয় সেভাবেই চলতে পারব। আমার কাছে দেশের মানুষই সবচেয়ে বড় কথা।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার ওয়ার্কিং কমিটির মেম্বারদের দয়া করে বলব, প্রত্যেক এলাকায় আমাদের টিম আছে এলাকাভিত্তিক কাজ করার। আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক আছে, এই টিমটা অতীতে সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর কী অত্যাচার তারা করেছে, এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে হবে। কারণ এগুলো আমাদের আর্কাইভে রাখা দরকার। এগুলো মানুষকে জানানোও দরকার। আমাদের প্রায় সব নেতাই জেলখানায় ছিল। জেলখানায় ঢুকেও হত্যাকাণ্ড চালাল। তারপর আবার এই অত্যাচার-নির্যাতন। আর পরবর্তীতে আবারও ক্ষমতায় আসার পর থেকে নির্যাতন। এক একজনকে ধরে নিয়ে গেছে। মেরে মেরে গুম করে দিয়েছে, খবরও পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বহু কর্মীকে এভাবে জীবন দিতে হয়েছে। অথবা এমনভাবে টর্চার করেছে পরবর্তীতে তারা বেশি দিন কিন্তু বেঁচে থাকতে পারেনি। কাজেই এর একটা হিসাব কিন্তু আমাদের সংগ্রহ করা দরকার। কারণ আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। অতীতের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা আমরা ভুলে যাই।’

তিনি বলেন, ‘এত অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্য দিয়েও কিন্তু এই সংগঠন টিকে থেকেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভেঙে ভেঙে টুকরো করে দেওয়া হয়েছিল। আমি এসে তো দেখলাম অনেক ব্রাকেট। একটা রাজনৈতিক দল, যে দলটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন তার ওপর বার বার আঘাত এসেছে, ঝড়-ঝঞ্ঝাট, অত্যাচার-নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। তার পরও এ দলটি টিকে থেকেছে এবং ২১ বছর পর সরকারে এসেছে।’

বৈঠকসূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের হাতে নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর