রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কনস্টেবলের সাহসিকতায় বাঁচল অর্ধশতাধিক যাত্রী

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কনস্টেবলের সাহসিকতায় বাঁচল অর্ধশতাধিক যাত্রী

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরিপুর এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ মিয়ার উপস্থিত বুদ্ধিতে রক্ষা পেয়েছে বাস ভর্তি বহু মানুষের প্রাণ। বাসটি গত শুক্রবার  বেলা ১১টার দিকে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে উল্টে গিয়ে রাস্তার ধারের ডোবায় পড়ে গিয়েছিল।

জানা গেছে, ঘটনার আগে ট্রাফিক সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন পারভেজ মিয়া। হঠাৎ তিনি দেখতে পান অদূরেই সড়ক ঘেঁষা ডোবায় যাত্রী নিয়ে একটি বাস উল্টে পড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে ছুটে যান। এরপর নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে নেমে পড়েন পচা ও দুর্গন্ধে ভরা ডোবার পানিতে। ভেঙে দেন ডোবায় পড়া বাসের সব কাচ। এর ফলে একে একে গাড়ির ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীরা প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাচ ভেঙে কনস্টেবল পারভেজ নিজে ঢুকে পড়েন গাড়ির ভিতরে। ডুব দিয়ে বের করে আনেন ৭ মাস বয়সী এক শিশুকে। এভাবে উদ্ধার করেন আরও অন্তত ২৫ জন নারী যাত্রীকে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার এই কনস্টেবলের বুদ্ধি ও বীরত্বে বড় একটি ট্র্যাজেডি থেকে রক্ষা পেয়েছে এতগুলো মানুষ। কনস্টেবল পারভেজের বুদ্ধি ও বীরত্বের সাক্ষী পেন্নাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার বলেন, ‘বাসটি ডোবায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ দ্রুত লাফিয়ে পড়েন পানিতে। তিনি প্রথমে গাড়ির গ্লাস ভেঙে দেন— যাতে করে ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীরা সহজে বের হতে পারেন। তার বুদ্ধিতে রক্ষা পায় বহু প্রাণ।’ পারভেজ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে ৩য়। এখনো তিনি অবিবাহিত। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানায় কর্মরত এই কনস্টেবল পারভেজ বলেন, যাত্রীবাহী বাসটি পানিতে পড়ে যাওয়ার পর আমি লাফিয়ে পড়ি। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া সবাইকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি। আমি পুলিশ নয় সাধারণ নাগরিক হলেও এ কাজটিই করব। আমার স্বপ্ন সব সময় মানুষের সেবা করে যাওয়া।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, কনস্টেবল পারভেজ মিয়ার এ কর্মতৎপরতায় গর্বিত কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ। যেখানে পচা পানিতে ভয়ে কেউ নামতে চায়নি সেখানে পারভেজ কারও পরামর্শ না নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তার সাহসীকতায় ডিআইজি ৫০ হাজার টাকা, কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ পাল ১০ হাজার টাকা ও স্থানীয় পেন্নাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ পাল জানান, যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে পারভেজ ঝুঁকি নিয়ে যা করেছে তা হাইওয়ে পুলিশ বিভাগের জন্য গৌরবের। পুরস্কার দিয়ে কাজের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়, তবুও এ কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি যাতে তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পান এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে।

সর্বশেষ খবর