মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্পদ অর্জনে নিষেধাজ্ঞায় চার রাষ্ট্রীয় ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সম্পদ অর্জনে নিষেধাজ্ঞায় চার রাষ্ট্রীয় ব্যাংক

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। অথচ ব্যাংকটির স্থায়ী সম্পত্তি (জমি বা ভবন) রয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংকটি এত বেশি সম্পদের মালিক হতে পারে না।

এই অতিরিক্ত সম্পদের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক এখন থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া নতুন কোনো জমি ক্রয় ও দালানকোঠার (স্থায়ী/অস্থায়ী সম্পদের) মালিকানা অর্জন করতে পারবে না। শুধু রূপালী ব্যাংক নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা ও অগ্রণীর ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা জারি হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুছুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো যে সম্পদ অর্জন করেছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার জারির আগে। নতুন করে তারা কোনো সম্পদ অর্জন করেনি। দেখা যাচ্ছে, পুরনো যে সম্পদ ছিল তা এখন ১০০ গুণ বেড়ে গেছে। ফলে অতিরিক্ত এই সম্পদ ধারণকে “অপরাধ” বলা যাবে না। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো যাতে নতুন করে আর কোনো সম্পদ ধারণ না করে সে বিষয়টি আমরা দেখছি।’

জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক যাতে নতুন করে আর কোনো সম্পদের মালিকানা অর্জন না করে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে শিগগিরই পাঠানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট তারা যে সার্কুলার জারি করে সে অনুযায়ী কোনো তফসিলি ব্যাংক তার পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি স্থাবর সম্পত্তি অর্জন করতে পারে না। যেসব ব্যাংকের স্থাবর বা স্থায়ী সম্পদের মূল্য এ সীমা অতিক্রম করেছে, সেগুলো পর্যাপ্ত পরিশোধিত মূলধন না বাড়িয়ে নতুন করে এ ধরনের সম্পদ ক্রয় বা ধারণ করতে পারবে না। সূত্র জানায়, রূপালী ব্যাংক স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান আমলের মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ও অস্ট্রেলিয়া ব্যাংক লিমিটেড নামীয় তিনটি ব্যাংকের পূর্ব পাকিস্তান অংশের একীভূতকরণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ থেকে ’৯৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডার (পিও) বলে ঋণের পাওনা সমন্বয় বা সরাসরি কেনার মাধ্যমে ২১ ধরনের সম্পদের মালিকানাপ্রাপ্ত হয়। রূপালী ব্যাংকের এই ২১ ধরনের সম্পত্তি ১৯৭২ থেকে ’৯৫ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত। ওই সময় এ সম্পদের মূল্য ছিল ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তবে জমির মূল্য বৃদ্ধি এবং ক্ষেত্রবিশেষ নতুন করে নির্মিত ভবনের বর্তমান মূল্য অনেক গুণ বেড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত হিসাবে ব্যাংকটির স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে, যা ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। ব্যাংকটির বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০১ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানায়, রূপালী ব্যাংকের মতো রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্য তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতাও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত। ওই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রতিটির স্থায়ী সম্পদের মূল্যমান নিজ নিজ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। সে কারণে সম্পদ ধারণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি শুধু রূপালী ব্যাংক নয়, অন্য তিন ব্যাংকের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।

সর্বশেষ খবর