বুধবার, ১২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংসদ সদস্য নিজেরা নিজেদের নিয়মকানুন ভঙ্গ করেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ সদস্য নিজেরা নিজেদের নিয়মকানুন ভঙ্গ করেছেন

শাহদীন মালিক

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আলোচনার এখতিয়ার সংসদ সদস্যদের নেই। এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের নিয়মকানুন ভঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা সংসদকে সার্বভৌম বলে দাবি করেছেন। কিন্তু সংসদ সার্বভৌম নয়। সংসদের ওই আলোচনা ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে দেখলে বুঝতে পারবেন সেদিন তারা কী বলেছেন? গতকাল রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুব্রত চৌধুরী ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ৫৩, ৬৩, ও ১৩৩ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সংসদে আলোচনা করা যাবে না। এই বিধি সংসদ প্রণীত একটি আইন। সংসদ সদস্যরা নিজরাই তাদের প্রণীত এই আইন মানেন না। এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, আমাদের সংসদ সদস্যরা সংসদের সার্বভৌমত্বের কথা বলেছেন। তবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে সংসদ সার্বভৌম নয়। শাহদীন মালিক বলেন, বিচার প্রশাসনে গলদ আছে, সর্বময় ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির। এটা সাংঘাতিক দুর্বল ব্যবস্থা। প্রশাসনিক ক্ষমতা এক হাতে প্রয়োগ করলে সেখানে গলদ হতে বাধ্য। একজন মানুষ তিনি যত বিজ্ঞই হোন না কেন, সব সিদ্ধান্ত যদি তিনি একাই নেন, তবে সমস্যা আছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রধান বিচারপতির ক্ষমতারও বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। মূল প্রবন্ধে শাহদীন মালিক বলেন, বিচার বিভাগের বিচারিক ক্ষমতার মধ্যে সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান অন্তর্ভুক্ত। তাই বিচারিক পর্যালোচনার এবং সংবিধানের ব্যাখ্যার মাধ্যমে উচ্চ আদালত সংসদে পাস করা যে কোনো আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতেই পারে। সংবিধান আদালতকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। বিচার বিভাগের বিচারিক পর্যালোচনার ক্ষমতা আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ, সংসদ আইন করেও তা রহিত করতে পারে না।  সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, যেখানে রাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি ন্যায়বিচার পায় সেটাই আদর্শ বিচার ব্যবস্থা। বিচার বিভাগ নিয়ে যেমন-তেমন কথা বললে এর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা থাকবে না। খেয়াল রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রের অন্য বিভাগগুলো যেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আরেকটি সংশোধনী এনে বলা হোক যে, বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এবং বাজেট ও আস্থা-অনাস্থার বিষয় ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করা যাবে না। তাহলে আমরা ষোড়শ সংশোধনী সমর্থন করব। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হলো, তখন রাজনীতিবিদরা বা সংসদ সদস্যরা এতটা উত্তেজিত ছিলেন না। প্রতিবাদ করলেন না। তখন বিচার বিভাগের সেই রায়কে তারা স্বাগত জানিয়েছিলেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর আজকে দেখছি সবারই স্বাধীনতার চেতনায়, সার্বভৌমত্বের চেতনায় আঘাত লাগল। তার মানে, আপনার রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি হলে সেই রায়কে স্বাগত, অন্যথায় সেই রায় মানার মানসিকতা হয় তো আমাদের মধ্যে এখনো আসেনি। অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, সংসদ সদস্যরা ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। কী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা বলতে হবে। তিনি বলেন, সংসদের ভাবমূর্তি কেউ ক্ষুণ্ন করে থাকলে সেই রাতে (সংসদ অধিবেশনে) সংসদ সদস্যরাই তা করেছেন। এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমরা বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকর দেখতে চাই। কিন্তু কলুষিত রাজনীতি বিরাজমান থাকলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে না। এ অবস্থায় দুর্নীতি রোধ করা এবং রাজনৈতিক সংস্কার দরকার, যাতে বিচার বিভাগকেও স্বাধীন করা যায় এবং মানুষ ন্যায়বিচার পায়। বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, মামলা নিষ্পত্তি হতে দেরি হওয়ায় মানুষ এখন বিচারের প্রতি অনেকটা আস্থাহীন হয়ে গেছে। তারা বাধ্য হয়ে আদালতে আসে। যাওয়ার সময় কানমলে যায়।

সর্বশেষ খবর