বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছেলেমেয়েরা ব্যবসা চেয়ে বিরক্ত করে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতা ভোগ করার জন্য রাজনীতি করি না। জনগণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, নিজের ভাগ্যে কী ঘটবে, নিজের জন্য কী করব জীবনেও কোনো দিন চিন্তা করিনি। আমার ছেলে-মেয়ে বা আমার বোনের ছেলে-মেয়ে কখনো এটা দিতে হবে, ওটা দিতে হবে করেন না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ব্যবসা চেয়ে বিরক্ত করেন না। বরং ওরা একজন আইসিটি একজন অটিজম নিয়ে কাজ করে বিশ্বের নজর কেড়েছে। আমার বোনের মেয়ে ব্রিটেনে দ্বিতীয়বার এমপি হয়েছে।

গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমি ও আমার বোনের পাঁচটি ছেলে মেয়ে। তাদেরকে বলে দিয়েছি, লেখাপড়া শিখেছ, ওইটুকুই তোমাদের সম্পদ। তারাও প্রতিটি কাজে আমাদের সহায়তা করছে। তিনি বলেন, আমি গ্রামের পর গ্রাম হেঁটেছি। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। কখনো দুর্ভিক্ষ হয়েছে, দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকায় গিয়েছি। কখনো ঝড় হয়েছে, সেখানে রিলিফ দিতে গিয়েছি। পেয়েছি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। কত মা-বোন ছুটে এসেছে, বুকে টেনে নিয়েছে। মাটির ঘরে বসিয়েছে। উঠোনের রাস্তায় ডাব কেটে দিয়ে বলেছে, মা এটা খাও। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শুধু বলেছে, বাবা জীবনটা দিয়ে গেছে। তুমিও পথে নেমেছ, মা? তুমি পথে নামছ আমাদের জন্য? বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, এই যে ভালোবাসার পরশ, মা-বাবা হারানোর বেদনা তো সেখান থেকেই ভুলে গেছি। সেখান থেকেই শক্তি পেয়েছি। এই মানুষগুলোর জন্যই তো আমার বাবা জীবন দিয়েছেন। তাই এদের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত। ক্ষমতা আমার জন্য ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য না। আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। মন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমার বাবা ৫৪ সালে মন্ত্রী ছিলেন। নিজের জন্য বাবা কিছু চাননি। তিনি জনগণের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী তিন বার। কখনো নিজের জন্য কী করব, সে কথা জীবনেও চিন্তা করিনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে মানুষ যখন শান্তির মুখ দেখতে শুরু করেছে, দেশের সম্ভাবনার স্বর্ণ দুয়ার খুলে গেছে, ঠিক তখনই জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি ও আমার ছোট বোন একদিনেই নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে যাই। এই শোক ও ব্যথা সহ্য করা যায় না। তবে এই শোক ও আঘাত আমি ও আমার বোনের ভিতরে শক্তি যুগিয়েছে। মানুষের ভালোবাসার পরশ থেকে শক্তি পেয়েছি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিদেশে থাকার দুঃসহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাঁচটি বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশের মাটিতে আমাদের থাকতে হয়েছে। রিফিউজি হিসেবে অন্য দেশে থাকা— এটা যে কতটা বেদনা দায়ক ও কষ্টকর আমরা তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি।’ তিনি বলেন, একটি বৈরী পরিবেশে আমি দেশে ফিরে আসি। আমার চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, কণ্ঠকাকীর্ণই ছিল। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমাকে এগোতে হয়েছিল। সত্য ও সততার পথে থাকলে যে কোনো বাধাই অতিক্রম করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে মানুষের জন্য যে কিছু করতে পারছি এটাই আনন্দ। ক্ষমতাটা হচ্ছে মানুষের সেবা করার সুযোগ। সে সুযোগটা যে পাচ্ছি এবং জনগণকে ভোট দিয়ে আমাকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের পার্লামেন্টের পার্টি আমাকে তাদের নেতা বানিয়েছে, আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের সেবা করতে পারছি, এটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া।

নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে না : স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয়ের চুক্তি হয়েছিল। যার আওতায় সাবমেরিন দুটি গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আগমন করে এবং এ বছরের ২৫ মার্চ আমি সাবমেরিন দুটি বানৌজা নবযাত্রা ও বানৌজা অগ্রযাত্রা নামে কমিশনিং করি, যা বর্তমানে আমাদের নৌবহরে যুক্ত আছে। তিনি বলেন, সাবমেরিন দুটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে উন্নত করেছে। সাবমেরিন দুটি যে কোনো বহিশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ, গভীর সমুদ্রে বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের নিরাপত্তা প্রদান করা, গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল তথ্য সংগ্রহসহ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্ব্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, চীন হতে সাবমেরিন ক্রয় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক একটি সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে না।

৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন : আয়েন উদ্দিনের (রাজশাহী-৩) তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমানে দুই মেয়াদে অর্থাৎ ২০০৯ হতে ২০১৭ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। তিনি বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে আমরা থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করেছি। এ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনায় আমরা বিদ্যমান শ্রম বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছি। বিগত জোট সরকারের আমলে যেখানে বিশ্বের মাত্র ৯৭টি দেশে কর্মী পাঠানো হতো, সেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা ১৬২টি দেশে উন্নীত হয়েছে।

৪৫টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি : শফিকুল ইসলাম শিমুলের (নাটোর-২) তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারতসহ ৪৫টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

সর্বশেষ খবর