শিরোনাম
শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জোট নয় ভোট বাড়াবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

জোট নয় ভোট বাড়াবে আওয়ামী লীগ

জোট নয়, এবার ভোট বাড়ানোর মিশনে আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আপাতত জোট বাড়ানোর চেয়ে ভোটার বাড়ানো কাজে মনোযোগী হচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ও ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যোগদানের জন্য কয়েক দফা বৈঠক করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ভোটের আগে জোট সম্প্রসারণ করার সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ। তবে তারা জোটের সঙ্গে যুগপৎ থাকতে পারেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক সংগঠন না হওয়ায় তাদের সঙ্গে জোট নয়, তবে ভোটের মাঠে সমর্থন চায় আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার বাড়ানোর কথাই ভাবছে আওয়ামী লীগ। যেসব দল এখন জোটে আসতে আগ্রহী সারা দেশে তাদের তেমন জোরদার ভোটব্যাংক নেই। সে কারণে জোটে দলের সংখ্যা বাড়ালে জোটভুক্ত দলের নেতাদের আবদার রাখতে হবে। সংসদীয় আসন ছেড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে অনেক চাওয়া-পাওয়া চলে আসবে। তাই জোটে দল বৃদ্ধির দিকে না ঝুঁকে মাঠে ভোটার বাড়ানোর ওপর জোর দেন তারা। তাদের মতে, ওটা করতে পারলেই আওয়ামী লীগ তৃতীয় মেয়াদে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসবে। সূত্রমতে, ২৫ জুলাই থেকে সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শুরু করছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এ কার্যক্রমে যেন একটি লোকও ভোটার হওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় এবং কোনো মৃত ব্যক্তিকে যেন ভোটার রাখা না হয়, সে নির্দেশনা দিয়ে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। গত বুধবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহায়তা করতে হবে। এ জন্য প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। নারী ও তরুণ ভোটাররা যেন বাদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আগামী নির্বাচনে দলের প্রচার-প্রচারণাসহ ভোটার বাড়াতে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম জোরদার করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দল প্রতিনিয়ত সদস্য সংগ্রহের বিষয়ে কাজ করছে, আমরা এক্ষেত্রে প্রথমে নতুন ভোটার এবং পরে নারী ভোটারদের ওপর ফোকাস দিচ্ছি। 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলার পর ১৪ দল গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়। নানামুখী চেষ্টার ফলে পরের বছর ২৩ দফা ঘোষণা সামনে রেখে বাম প্রগতিশীল জোট ১১ দল, আওয়ামী লীগ, জাসদ ও ন্যাপ মিলে ১৪ দল গঠিত হয়। পরে সিপিবি, বাসদসহ ১১ দলের চারটি দল বেরিয়ে যায়। বর্তমানে ১৪ দলের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (একাংশ), জাতীয় পার্টি জেপি ও তরীকত ফেডারেশন জোটে রয়েছে। বছরখানেক আগে জাসদ ভেঙে দুটি আলাদা জাসদ গঠিত হয়। দুই জাসদই বর্তমানে ১৪ দলে রয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স-বিএনএ জোটও ১৪ দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। এ জন্য কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন জোট নেতাদের সঙ্গে। নাজমুল হুদার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমও যোগ দিয়েছেন। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের ফোনে গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বিএনএ জোটের প্রধান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি ১৪ দলের সঙ্গে জোট করতে চাই। এ জন্য একাধিকবার বৈঠক করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই। এ জন্য সময়ও চেয়েছি। জোট প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরই সিদ্ধান্ত হবে— আমার তৃণমূল বিএনপি নাকি বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সকে জোটে নেবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষকান্তি ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ মুুহূর্তে আমাদের জোটের পরিধি বাড়ানো কোনো সম্ভাবনা নেই। ভোটের পরিধি বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। আমরা তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছি, যারা গতবার ভোটার হতে পারেননি এবং এবার যাদের বয়স ১৮-এর বেশি হয়েছে তাদের ভোটার হওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। নিজেদের সততা, ভালোবাসা ও ব্যবহার নিয়ে নতুন ভোটারদের কাছে টানতে হবে। সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।

একাদশ নির্বাচনের আগে ‘জোট নয়, ভোট বাড়াবেন’— এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ভোট বাড়ানোর মিশনে কাজ শুরু করেছি। সাড়ে আট বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে, সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে উন্নয়নের পক্ষে আকৃষ্ট করব। সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে আমাদের জনসমর্থন বাড়ছে। এখন ভোটার ও কর্মী-সমর্থক বাড়াতে যাবতীয় সাংগঠনিক কাজ করছি। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রেখে আমরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করব ইনশা আল্লাহ।

সর্বশেষ খবর