শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আরও দল টানতে চায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

আরও দল টানতে চায় বিএনপি

আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে জোটের পরিধি আরও বাড়াতে চায় বিএনপি। সরাসরি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে যোগ না দিলেও অন্ততপক্ষে যুগপৎ আন্দোলন ও সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে ভিতরে ভিতরে আলোচনাও চলছে বিএনপির। ভোটে ‘সরকারবিরোধী ঐক্য’ হলে বেশ কয়েকটি আসনও ছাড় দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিশেষ করে ২০ দলের বাইরে গণফোরাম, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের জন্য আসন ছাড় দেওয়ার কথাবার্তাও হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ বর্জন করা দল বিএনপিতে। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ গত রমজানে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মানে দেওয়া ইফতারে এক টেবিলে বসে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে উদ্দেশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘সবার সঙ্গে বসে আপনারা আলোচনা করুন। আসুন সরকারবিরোধী দলগুলো নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম তৈরি করুন। আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান চাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘আমরা আলোচনা করছি, আপনারাও আলোচনা করুন।’ জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের দায়িত্বশীল সিনিয়র কয়েক নেতা আওয়ামী লীগ জোটের বাইরে থাকা অন্য দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বিভিন্ন সময়ে ওইসব নেতার সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন তিনি। এর মধ্যে দু-একটি দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বিএনপিকে জানিয়েছে। কোনো কোনো দল বিএনপির সঙ্গে এখনই যুগপৎ আন্দোলন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আবার কোনো কোনো দল বিএনপির পাশাপাশি সরকারি দলের সঙ্গে সমানতালে যোগাযোগও রাখছে বলে জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোকে বিএনপি বেশ কয়েকটি আসন ছেড়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে বগুড়ার একটি আসন মাহমুদুর রহমান মান্নার জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। আলোচনার ভিত্তিতে সেখানে বিএনপি কোনো প্রার্থী নাও দিতে পারে। একইভাবে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাসদ ও সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য দলের সিনিয়র নেতাদের জন্য আরও কয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে পারে।

জানা গেছে, কয়েক দিন আগে বিএনপি-প্রধান বেগম খালেদা জিয়া জোটের বাইরে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে চা-চক্রের আয়োজন করেন। চায়ের আমন্ত্রণে শুধু বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অংশ নেন। তবে তিনি বিএনপিকে কিছু পরামর্শ দিয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে জোট বা যুগপৎ আন্দোলন করবেন কিনা, তা নিয়ে কিছু বলেননি। এরপর কয়েকটি দলের আসার কথা থাকলেও তারা বিএনপির ডাকে শেষ পর্যন্ত সাড়া দেয়নি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়েই প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে কোনো মিটিং না করার সিদ্ধান্ত নেয় ওই দলগুলো। পরে বিএনপি বিকল্প পথে এগোতে শুরু করে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ড. কামাল, বি চৌধুরী, মান্না ও রবের নেতৃত্বে আরেকটি বিকল্প জোট করার চিন্তাভাবনা চলছে। সেখানে বাসদ, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি দল যোগ দেবে। এটি সরকারবিরোধী একটি জোট হতে পারে। বিএনপির সঙ্গে সেই জোটের আলাদা একটি প্লাটফরমও হতে পারে। তবে বাসদ, সিপিবিসহ দু-একটি বাম দল এতে আপত্তি জানিয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে যেসব রাজনৈতিক দল সোচ্চার, তাদের সঙ্গে কমবেশি আলোচনা হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে থেকেই এ কার্যক্রম চলছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে কৌশলগত কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম এখনই প্রকাশ করা যাবে না। সরকারবিরোধী অন্য দলগুলো নিয়ে একটি প্লাটফরম তৈরি করে নির্বাচনে যেতে চাই আমরা।’

রব-মান্নাদের ডিনারে পুলিশি বাধার অভিযোগ : গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরার একটি বাসায় আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দলের নেতাদের একটি ডিনার পার্টিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। সেখানে বিকল্পধারা, গণফোরাম, বাসদসহ বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদেরও আসার কথা ছিল। নতুন জোট নিয়ে সেখানে প্রাথমিকভাবে আলাপ-আলোচনারও কথা ছিল। তবে এ অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ। এর একপর্যায়ে উত্তরা থানার পুলিশ এসে জানায়, এখানে কোনো বৈঠক করা যাবে না। একপর্যায়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও তার দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান চলে যান। এ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আ স ম রবের বাসায় ডিনারের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানেও পুলিশ বাধা দিয়েছে। আরও কয়েকটি দলের প্রধান আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেননি। বাসার একটি ডিনারেও পুলিশি হানা কাম্য হতে পারে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর