শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচার শুরু পাঁচ আসামির

বনানীর দুই তরুণী ধর্ষণ

আদালত প্রতিবেদক

বিচার শুরু পাঁচ আসামির

শাফাত - নাঈম

রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় শাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। একই সঙ্গে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৪ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার দুই নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শফিউল আজম এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আকবর সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ গঠনের আগে পাঁচ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামি পক্ষ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করে। কিন্তু আসামি পক্ষের সেই অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে দেয় আদালত। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে বিচারক জানতে চান— তারা দোষী না নির্দোষ। জবাবে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সুবিচার প্রার্থনা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আসামি শাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১) ধারায় ও বাকি তিন আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করায় ৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করে আদালত। এর ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হলো। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন, আবদুর রহমান হাওলাদার ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মো. নজিবুল্লা হীরু। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারা হলেন— আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ, তার বন্ধু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ই- মেকার্স’ এর কর্মকর্তা আবদুল হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ, ঢাকার পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক রেগনাম গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী। এর আগে ৯ জুলাই এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। ওই দিন শুনানির জন্য কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় পাঁচ আসামিকে। আসামি পক্ষের সময়ের আবেদনের কারণে ওই দিন অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে যায়। মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রধান আসামি শাফাতের জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে ওই দুই তরুণী রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে তাদের হয়রানি করে পুলিশ। এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে হৈচৈ পড়ে যায়। পরে গত ৬ মে বনানী থানা পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করে। ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষণের আলামত পাঠানো হলে পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মেলেনি। এদিকে থানায় মামলা হওয়ার পাঁচ দিন পর গত ১১ মে সিলেট থেকে শাফাত ও সাদমানকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১৫ মে শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত ঢাকা থেকে গ্রেফতার হন। সব শেষে ১৭ মে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমকে। পরে মামলার আসামি গাড়িচালক বিল্লাল ছাড়া বাকি চার আসামিই নিজেদের দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় বিচারকের কাছে ঘটনার জবানবন্দি দেন। পরে ঘটনার তদন্ত করে ৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। অভিযোগপত্রে বাদীপক্ষে মোট ৪৭ জনকে সাক্ষী করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে আসামিরা মামলার বাদী এবং তার বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করার পর বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে রুমে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে আসামি শাফাত আহমেদ ও বাদীর বান্ধবীকে আবদুল হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ ধর্ষণ করেন এবং বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর