শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোনো দেশে রাজনীতিকরা এত অসহিষ্ণু হন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোনো দেশে রাজনীতিকরা এত অসহিষ্ণু হন না

ব্যারিস্টার মইনুুল হোসেন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা অনেক বেশি অসহিষ্ণু। পৃথিবীর কোনো দেশের রাজনীতিবিদরা এত অসহিষ্ণু হন না। গণতান্ত্রির সংসদীয় সরকারে যে পদ্ধতি বা চর্চা, সেটা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনুপস্থিত। তারা চান নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে আইনি কাঠামোর মধ্যে তাদের চলতে হয় এটা কেউ বোঝেনই না।’ বুধবার চ্যানেল আইয়ে তৃতীয় মাত্রা টক শোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় টক শোতে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন।

মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংসদ সদস্যরা মনে করেন, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও তারা শাসনতন্ত্রের অধীন। শাসনতন্ত্র মেনেই সংসদে এসেছেন তারা এবং কাজ করবেন। রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেই সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাস্তবতা হলো, রাজনীতিকরা তা বিশ্বাস করতে চান না। তারা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চান।’ তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে শাসনতন্ত্র অধিকার দেয় সংসদের কার্যাবলি আইনিভাবে চলছে কি না তা পর্যবেক্ষণের। এক অর্থে রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগ সবার ঊর্ধ্বে। সম্প্রতি আমাদের জাতীয় সংসদে যে ভাষায় বিচার বিভাগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা লজ্জার। সংসদের একটি ভাষা আছে, সংসদীয় ভাষা। যারা বিচার বিভাগ নিয়ে এসব বলেছেন তারা নিজেদের ছোট করেছেন। তাদের মধ্যে যে অসহিষ্ণুতা দেখা গেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।’

ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘শাসনতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা বিচার বিভাগের। সরকারের ওপর ওয়াচডগের কাজ করে বিচার বিভাগ। শাসনতন্ত্র সবচেয়ে বড়। বিচার বিভাগ দেখে, শাসনতন্ত্র অনুযায়ী সরকারের অন্য দুই বিভাগ চলে কি না। রাজনীতিকরা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানকরণ করার চেষ্টা করছে বিচার বিভাগ। এ অভিযোগ মারাত্মক। আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই, রাজনীতিবিদও নেই।’

বিশিষ্ট এই আইনজীবী বলেন, রাজনীতিকদের গালি দিতে পারেন। তাদের নিয়ে তর্ক-বিতর্ক থাকে। কিন্তু বিচারক বা বিচার বিভাগ নিয়ে কোনো তর্ক চলে না। সংসদে পাকিস্তান আমলের স্বৈরতন্ত্র চলছে। বিচার বিভাগ বিচার করে বিভিন্ন তথ্যসূত্র নিয়ে। এখানে ভারত-পাকিস্তান আসার বিষয় নেই। সংসদ অত্যন্ত সীমিত ক্ষমতার অধিকারী। রুল অব ল মেনে চলবেন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা। সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ কোনো দেশে পার্লামেন্ট বিচারকদের ইমপিচমেন্ট করে না।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা যদি লেখাপড়া, রাজনীতি না জানেন, তাহলে হবে না। তারা কিছুই মানতে চান না। যখন আইন করেন তখন মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে চিন্তা করেন না। ক্ষমতায় গেলে সব করতে পারি এটা হয় না। রাজনীতিকদের বিচার বিভাগ বেশি কাজে লাগে। যখন তারা বিপদে পড়েন তারা সেখানেই যান। এখন বিচার বিভাগকে যদি পদানত করা হয় তাহলে কিছু টিকবে না। সরকারকে বলব, জাজ নিয়োগের সময় দেখে দেন তিনি কী। দুর্নীতিগ্রস্ত কি না বা অসৎ কি না। তা দেখে যদি নিয়োগ দেন তাহলে এ সমস্যা তৈরি হয় না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। আপনি যদি বিচার করেন এবং দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়, আপনি তো আর বিচার করতে পারবেন না।’

সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘সারা দেশে বন্যা চলছে। রাজনীতিবিদদের উচিত ছিল সংসদ স্থগিত রেখে সেখানে যাওয়া। কিন্তু তারা তা রেখে বিচার বিভাগ নিয়ে আলোচনা করছেন। সরকার বেসামাল সরকারে পরিণত হয়েছে। বড় বড় প্রকল্প নিয়েছে সরকার। কিন্তু রাস্তাঘাট সব ভাঙাচোরা। আইনের নামে নৈরাজ্য হচ্ছে। সরকার পুলিশের ওপর এত নির্ভরশীল হয়েছে যে পুলিশ আর জনগণের পুলিশ থাকছে না। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। সরকার তা চিন্তা করে না। এমপিরা পুলিশ নিয়ে চলেন। কেন? নিরাপত্তাহীনতার জন্য। আজকে সরকার অর্থ পুলিশ। কোনো বিভাগ ঠিকমতো চলছে না। অথচ সরকার আছে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন যদি ভালো হয়, সৎ দিয়ে যদি শুরু করেন, তাহলে সবই ঠিকভাবে চলবে। কিন্তু চোর-ডাকাত যদি নির্বাচন করেন তাহলে কী হবে? সব জায়গায় ভারসাম্য থাকতে হবে।

মইনুল হোসেন বলেন, ‘আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে কথা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষমতার অধিকারী। সেখানে ভোট চুরি করবে এমন অভিযোগ কেউ করে না। আমাদের এখানে উল্টো। নির্বাচন কমিশনের হাতে কোনো ক্ষমতা থাকে না। সব ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। নির্বাচন কমিশন কোনো কিছু করতে পারে না এটাই বাস্তবতা।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে যে লোকগুলো আছে, তারা তাকে ভুল বোঝাচ্ছে। যত চাটুকার, দুর্নীতিবাজ প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবহার করছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিপদ! দেশে সুশাসন নেই। জনগণ কষ্টে আছে।’

সর্বশেষ খবর