শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
কোন্দল থামছে না দুই দলে

তুচ্ছ ঘটনায় বিবাদে-সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তুচ্ছ ঘটনায় বিবাদে-সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রাতে না যাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার বিকালে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুদ্দিন আহমেদ জুয়েলকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ একই সংগঠনের শাখা সভাপতি সোহেল ওরফে চাইনিজ সোহেলের বিরুদ্ধে। বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে মহানগর ও জেলার দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীর মধ্যে মল্লযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। রাজবাড়ী জেলা কমিটি ঘোষণার পর নতুন দায়িত্ব পাওয়া দফতর সম্পাদক খন্দকার নূরুল নেওয়াজ নুরুকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের বিরুদ্ধে। শুধু এ কয়টি স্থানেই নয়, সারা দেশেই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবাদ-বিসম্বাদে জড়িয়ে পড়ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শীর্ষ নেতাদের সামনেই ঘটছে মারামারি ও চেয়ার-টেবিল ছোড়াছুড়ি। চেন অব কমান্ড না মানায় এ নিয়ে হতাশও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের সিনিয়র একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এ হতাশার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি এখন বেশি শক্তিশালী ও চাঙ্গা। বিশেষ করে সদস্য সংগ্রহ অভিযান ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে। পুনর্গঠন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা রয়েছে। একে কোন্দল বলা যাবে না।’ বিএনপির একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘সামনে আমরা যখন নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছোটখাটো ঘটনায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় আর সম্ভাবনা কিছু দেখি না। এ নিয়ে নেতাদের কথাও শুনতে চায় না সংঘর্ষে জড়ানো কর্মী-সমর্থকরা। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঝগড়া-বিবাদ থামাতে না পারলে বিএনপিকে চরম মাশুল দিতে হবে।’ জানা যায়, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে মহানগর ও জেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতারা চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। দুই গ্রুপেই ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা অংশ নেন। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানসহ কেন্দ্রীয় একঝাঁক নেতা। তারা চলে আসার পরই এ ঘটনা ঘটে। একে অন্যের জামা ও শার্ট ছিঁড়ে খালি গায়ে ধস্তাধস্তিতেও লিপ্ত হন কর্মী-সমর্থকরা। ১০ জুলাই রাজবাড়ী বিএনপির নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে পরদিনই পার্টি অফিসে কমিটির তালিকা পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নবঘোষিত কমিটির দফতর সম্পাদক খন্দকার নূরুল নেওয়াজ নুরুকে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। নবগঠিত কমিটির সভাপতি আলী নেওয়াজ খৈয়াম ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ হারুন দুই ভাগে অবস্থান নেন। সভাপতির পক্ষে কমিটির সদস্য নাসিরুল হক সাবু আর সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল খালেক, অ্যাডভোকেট আসলাম ও সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে সভাপতি গ্রুপের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা-কর্মীদের দোষারোপ করছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপ থেকে আজ পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজবাড়ী বিএনপিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শামসুল আলম তোফা ও ইকবাল ফরহাদ নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটি এখনো মেনে নিতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান গ্রুপের কিছু নেতা-কর্মী। গত রমজানে একই স্থানে ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। মূলধারার বিএনপির নেতা-কর্মীরা বর্তমান কমিটির সঙ্গে থাকলেও ছোট একটি অংশ রয়েছে মাহমুদুল হাসান গ্রুপে। এ নিয়ে বিএনপিতে এখনো উত্তেজনা রয়েছে। বাসাইলে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখতে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান সম্প্রতি স্থানীয় তিন নেতার সদস্যপদ স্থগিত করেন। তারা হলেন বাসাইল উপজেলা বিএনপির সদস্য সহীদুল ইসলাম মুন্সী, সখীপুর উপজেলা বিএনপি নেতা শেখ মো. হাবিব ও বাছেদ শিকদার। তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এক চিঠির মাধ্যমে। বুধবার ২৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয় চট্টগ্রাম মহানগরে। এরপর ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয় অনেকের মধ্যেই। কেউ কেউ পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন। এর মধ্যে কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আহমেদুর রহমান চৌধুরী রাসেল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘এমন কমিটিতে আমি থাকতে চাই না। প্রয়োজনে যুবদল করব, এই কমিটিতে থাকব না।’ যুগ্ম সম্পাদকের চিঠি পাওয়ার পরই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির আরও অনেকেই পদত্যাগের কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। গতকাল মহানগরের চারটি থানা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর পদবঞ্চিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দলীয় কোন্দলে খুলনা মহানগরীতে পাঁচটি থানায় সম্মেলন স্থগিত রয়েছে বিএনপির। স্থানীয় ছয় নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ায় খুলনা মহানগরী বিএনপিতে এখন ভাঙনের সুর। মহানগরীর কাউন্সিল করতে পারা যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। রাজশাহী মহানগরী ও জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পরও বিবাদ চলছেই। মহানগরী কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আন্দোলনে ভূমিকা না থাকলেও ময়মনসিংহ মহানগর ও দক্ষিণ জেলার নেতাদের বড় অংশই পদের জন্য ঘাম ঝরাচ্ছেন। কমিটি ঘোষণা হলে বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কাও করা হচ্ছে।

জানা যায়, বিএনপির সাংগঠনিক জেলা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক জেলায় পূর্ণাঙ্গ, আংশিক কিংবা আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগমুহূর্তে রাজবাড়ী ও চট্টগ্রাম মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দিয়ে যান। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সিরাজগঞ্জসহ আরও দু-একটি কমিটি হতে পারে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর