রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
এসএসএফকে প্রধানমন্ত্রী

নিরাপত্তা দিতে গিয়ে জনবিচ্ছিন্ন করবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরাপত্তা দিতে গিয়ে জনবিচ্ছিন্ন করবেন না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে জনগণ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে না যান, সে ব্যাপারে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। সেই জনগণ থেকে যেন আমরা বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই, সে দিকটায় একটু ভালোভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসএসএফের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এসএসএফ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাব্যবস্থার দায়িত্ব পালন করে। এসএসএফের মহাপরিচালক মো. শফিকুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব.) ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনের সদস্য এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। ভিআইপিদের সঙ্গে জনগণের স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। জনগণের সঙ্গে যেন তাদের কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেই ভিআইপিদের নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার নিজের জন্য যতটা না চিন্তা হয়, আমার নিরাপত্তার জন্য যারা থাকেন, তাদের জন্য সব থেকে বেশি চিন্তা হয়। যে কারণে আমি প্রতিদিন প্রতিবার নামাজ পড়ে আমার ছেলেমেয়ে-সন্তানের জন্য যেমন দোয়া করি, দেশবাসীর জন্য দোয়া করি, সেই সঙ্গে আমার জন্য যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের জন্যও আমি সব থেকে বেশি দোয়া করি।’

জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পূরণে কাজ করছি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ বেচার মুচলেকা দিয়ে আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতায় আসে না। জনগণ আমাদের ২০০৯ সালে আবার ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আনে। বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এ প্রশংসা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি।’ তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও এমনটি নেই যে, ১২২ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

ক্লিনটনও বলেছিলেন গ্যাস বিক্রি করতে, রাজি হইনি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিমি কার্টারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির মাধ্যমে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে বলেছিলেন। আমি তাকে ওই জবাবই দিয়েছিলাম যে আগে আমার দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে হবে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারতে হয়েছিল।’ এরপর যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েও একই অনুরোধ পেয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন একই প্রশ্ন। আমিও একই উত্তর দিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন আমেরিকান কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করে। তাদের ইচ্ছা ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করবে। আর ভারত এই গ্যাস কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি আমাদের গ্যাস বিক্রি করার পক্ষে মত দিইনি। আমার কথা ছিল, আগে আমার কত গ্যাস আছে জানতে হবে। ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখতে হবে। তারপর যদি অতিরিক্ত থাকে, তবেই বিক্রি করব।’ যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার অনুরোধে সন্দেহ হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস আমার কত আছে, তা আগে সার্ভে করে বের করতে হবে। তারা একবার সার্ভে করায়। এরপর আর করেনি। আমি বার বার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা করেনি বলে আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল। তার মানে আমাদের দেশে কোনো গ্যাস নেই। তাহলে কেন বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছে?’ তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ আমি অন্যের হাতে তুলে দিতে পারি না। তাই আমি রাজি হইনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল আমার বিরুদ্ধে, আমার মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে। এটা একটা ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার আদালত রায় দিয়েছে, এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা অভিযোগ।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবা করতে এসেছি। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়। ১৯৫৪ সালে আমি মন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমি নিজে এর আগে প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। কাজেই দুর্নীতি করে যদি নিজের ভাগ্য গড়ার ইচ্ছা থাকত তাহলে বহু আগেই তা করতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমাদের নেতারা ঘরে থাকতে পারত না। আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ আমাদের অনেক নেতাকে হত্যা করা হয়। ২০০৪ সালে আমার ওপর হামলার আগে আমার নিরাপত্তা তুলে নেয় বিএনপি সরকার। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে আমাদের কোনো আলোচনা করতে দেয়নি সংসদে।’ তিনি বলেন, ‘আট বছর পর ২০০৯ সালে জনগণ আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ দেয়। পাঁচ বছর খুব কম সময়, তবুও আমরা উন্নয়ন শুরু করেছি। আমাদের নীতিমালা থাকে, নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়া থাকে। প্রতি বছর বাজেট দেওয়ার সময় আমরা দেখি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার কতটা বাস্তবায়ন হয়।’ জঙ্গিবাদ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ সারা বিশ্বেই আছে। হলি আর্টিজানে হামলা যখন হয়, তখন অনেক বিদেশি বলেছেন, এটা আমরা মোকাবিলা করতে পারব না। কয়েক ঘণ্টায় আমরা এটা দমন করতে পেরেছি। বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এখন সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। বাবা-মা তাদের সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক হয়েছেন। জঙ্গিবাদ আন্তর্জাতিক সমস্যা হলেও এটা আমরা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করব।’

সর্বশেষ খবর