রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকা ছাড়লেন শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা

সম্পর্ক গভীরে নিতে মতৈক্য

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশে তিন দিনের সফর শেষে গতকাল ঢাকা ছেড়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এর আগে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিরিসেনা। খবর বিডিনিউজের। এদিকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়সহ সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক গভীরতর করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার ঢাকা সফর শেষে গতকাল দুই দেশের প্রধান নির্বাহীর মধ্যে এক যৌথ বিবৃতি থেকে এ ঘোষণা এসেছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ায় ‘গভীর সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছেন। এই সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উচ্চশিক্ষা ও আর্থিক বিষয়সহ সার্বিকভাবে দুই দেশের জনগণের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপনে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের সুফল পেতে শুল্ক সহযোগিতা, দ্বৈত কর পরিহার এবং দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ বিষয়ে চুক্তি শিগগিরই চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুই নেতা নির্দেশ দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তারা। একই সঙ্গে তারা উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রক্রিয়াগুলো গভীর করার বিষয়ে একমত হন। বিমসটেক ও সার্কের আওতায় লক্ষ্যভেদী ও ফলাফলমুখী আঞ্চলিক সহযোগিতা স্থাপনে কাজ করার ওপর জোর দেন দুই নেতা। সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা ও যে কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক আবরণে উগ্রবাদীকরণ থেকে সৃষ্ট হুমকির বিষয়টি আমলে নিয়ে দুই দেশ এবং এর বাইরে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তারা একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এ জন্য সহনশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও বহুত্ববাদ নিয়ে ২০১৮ সালে একটি ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন সিরিসেনা ও হাসিনা। এর ফলে ২০১৭ সালের শেষে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) চূড়ান্ত করার পথ সুগম হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

যৌথ উদ্যোগ ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বাড়ানোর মাধ্যমে উভয় দেশ বিনিয়োগের সুফল পেতে পারে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার কথা স্মরণ করেন দুই নেতা। ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির জন্য সংসদে নেওয়া প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তারা বাংলাদেশের নিরপরাধ ও মুক্তিকামী জনতার ওপর বিস্মরণীয় নির্যাতনের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। শুক্রবার সকালে প্রতিবেশী এই দুই দেশের নেতা প্রথমে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন। তারপর দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলি হলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। শেষে করবীতে দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। সেখানে তার সম্মানে দেওয়া এক ভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অংশ নেন। গতকাল ঢাকা ছাড়ার আগে বাণিজ্য বিষয়ে একটি সংলাপে অংশ নেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আহ্বান : স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আরও বাংলাদেশি মেডিকেল পেশাজীবী নেওয়ার জন্য শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। গতকাল বিকালে সিরিসেনার সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান। এ সময় তারা দুই দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্য খাতের অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা প্রাথমিক স্বাস্থ্য খাত, বিশেষ করে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুজ্বর মোকাবিলায় ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। এ ব্যাপারে আমরা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য আমাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছি।’ নাসিম বলেন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টও বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে শ্রীলঙ্কার আরও ছাত্রছাত্রী ভর্তির উদ্যোগ গ্রহণে বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। বৈঠককালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন এমপি নাজমুল হাসান পাপন।

সর্বশেষ খবর