সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

গোয়েন্দা নজরদারিতে ১০০ অস্ত্র ব্যবসায়ী

মাহবুব মমতাজী

গোয়েন্দা নজরদারিতে ১০০ অস্ত্র ব্যবসায়ী

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই দফা অবৈধ অস্ত্র জব্দের পর অন্তত ১০০ অস্ত্র ব্যবসায়ীর তালিকা করে তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্র আমদানি ও বিক্রির খুঁটিনাটি বিষয়ও তদন্ত করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মতে, যে কোনো অরাজক পরিস্থিতি এবং ঝুঁকি এড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সূত্র মতে, বাইরে থেকে অস্ত্র আসবে, তবে তা যথাযথ নিয়ম মেনেই আনতে হবে। যখনই নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে অস্ত্র নিয়ে আসা হয়— তখন দেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তাই তদন্তে অস্ত্র বিক্রির রশিদ হালনাগাদ এবং আমদানি-বিক্রির কাগজপত্র যাচাই করে অস্ত্রের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই তদন্তেই ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্র আমদানির মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। আর এগুলোর ব্যবহারকারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে। 

জানা গেছে, গত ১৩ জুলাই হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৯টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দারা। বিমানবন্দরের ফ্রেইট ইউনিট থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ৯ জুলাই এয়ারকার্গো থেকে আমদানি নিষিদ্ধ আরও দুটি ওয়ালথার পিপি পিস্তল জব্দ করা হয়। দুই দফাতে এই অবৈধ অস্ত্রগুলো ইতালি থেকে নিয়ে আসে মেসার্স ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আমদানিনীতি অনুসারে জব্দ হওয়া অস্ত্রগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দার অতিরিক্ত মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যরা হলেন উপপরিচালক সাইফুর রহমান ও সহকারী পরিচালক জোবায়দা খানম। এ কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সাধারণত অস্ত্রের তিনটি অংশ থাকে। এর মধ্যে আছে বেরেল, প্লাইডার ও বডি। প্রতিটি অংশের নম্বর (ইউনিক) একই হতে হয়। কিন্তু বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া অস্ত্রগুলোর তিনটি অংশেরই নম্বর ছিল ভিন্ন ভিন্ন। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ প্রতিবেদককে জানান, পুরনো ও ফ্যাব্রিকেটেড অস্ত্র আমাদের দেশে আমদানি করা নিষিদ্ধ। জব্দ হওয়া অস্ত্রগুলো নিয়ে অনেক রহস্য ও ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই অস্ত্রগুলো দ্বারা রাষ্ট্র কিংবা জনগণের বড় ধরনের ক্ষতি করা সম্ভব। বিমানবন্দরে পর পর দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১০০ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে নজরে রেখে তদন্ত করছি। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো অস্ত্র বিক্রি কিংবা ব্যবহারের আগে তার ইউনিক নম্বর এবং ক্রেতা ও ব্যবহারকারীর নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। ওই ইউনিক নম্বর দেখেই পরবর্তীতে যেকোনো ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহার হলে তার ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করা হয়। যদি ইউনিক নম্বর ঠিক না থাকে তাহলে তার ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যে কেউ যেকোনো সময়ে এ ধরনের অস্ত্র কেনে কিংবা ভাড়া করে কোনো ব্যক্তিকে খুন করতে পারেন। এ ঘটনার পর অস্ত্র উদ্ধার হলে এর ব্যবহারকারী খুনের বিষয়টি অস্বীকারও করতে পারেন— যেহেতু অস্ত্রের তিন অংশের নম্বর ঠিক নেই। জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে অস্ত্র জব্দের পর ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানিতে গিয়ে অনুসন্ধান চালায় শুল্ক গোয়েন্দার একটি তদন্তদল। রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে অবস্থিত ইমরান আর্মসের শোরুমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রকারের আগ্নেয়াস্ত্র কেনা-বেচার চিত্র পান গোয়েন্দারা। এ সময় তারা ওই শোরুমে মজুদ থাকা আমদানি করা ৫৮টি শটগান, ১৯টি পিস্তল এবং দেশি ৪৩টি শটগান, ১০টি রিভলবার, ১৪টি রাইফেল ও ১১টি এয়ারগানসহ মোট ১৬১টি অস্ত্রের তথ্য সংগ্রহ করেন।

সর্বশেষ খবর