সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি পদক বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী

বন্যায় ভয় থাকলেও খাদ্য মজুদ রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটা এমন জায়গায়, প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাঁচতে হয়। তিনি বলেন, দেশে আরেকটি বন্যার ‘পদধ্বনি’ শোনা যাচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ রয়েছে, যাতে মানুষ কোনোমতেই কষ্ট না পায়।

গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ১৪২১ ও ১৪২২ বঙ্গাব্দের ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারিভাবে খাদ্য মজুদ এক কোটি ৬ লাখ মেট্রিক টন বলে জানান তিনি।

দেশের কৃষি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার প্রতিবছর এই পুরস্কার দেয়। ১০টি শ্রেণিতে ৫টি সোনা, ৯টি রৌপ্য এবং ১৮টি ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। পুরস্কার বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সোনা, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক, নগদ অর্থের চেক এবং সনদপত্র গ্রহণ করেন।

কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মইনুদ্দিন আবদুল্লাহ প্রমুখ।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অতিরিক্ত খাদ্য আমদানি করে মজুদ ঠিক রাখছি। পাশাপাশি খাদ্য আমদানির ওপর যে কর ছিল সেটাও কমিয়ে এনেছি। সরকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নিয়েছে বলেই বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দুই কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হতো। এটা আমাদেরই রেখে যাওয়া ছিল। বিএনপি সরকার আর তা থেকে বাড়াতে পারেনি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৮৮ লাখ মেট্রিক টন। এবারে প্রায় চার কোটির কাছাকাছি। তবে হাওরে অকাল বন্যায় আমাদের কিছু খাদ্য নষ্ট হয়ে গেছে। খাদ্য ঘাটতি যেন না হয় সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের মানুষ যাতে খাদ্যে কষ্ট না পায় তার ব্যবস্থা করেছি। কৃষকদের আমরা সার, ভর্তুকি, কৃষি উপকরণ কার্ড করে দিয়েছি। কৃষিতে এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ডাল, মসলাসহ ২৪টি ফসল উৎপাদনে চার শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। আমরা এখন স্ট্রবেরি উৎপাদন করছি। আমরা পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে এনেছি। সরকার পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গবেষকরা নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। আমরা তাদের সহায়তা করছি। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো এবং জলাভূমি সংরক্ষণের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা এ জন্য বিভিন্ন জায়গায় জলাধার সৃষ্টি করছি যাতে সেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ থাকে। আরেকটা বিষয় আগুন লাগলেও নেভাতে পানি লাগবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকার বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা হাল ধরেছি। আজ বাংলাদেশ ?উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহরের গণ্ডির মধ্যে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের মাটির সংস্পর্শহীনতায় শঙ্কা প্রকাশ করে তাদের মাঠপর্যায়ের কৃষিকাজের বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েরা অন্ধ (বাস্তবতা বিবর্জিত) হয়ে যেন না থাকে সে বিষয়টাতে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে। ধান কাটে বা ধান লাগায় এমন মৌসুমে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের গ্রামে সেই ধানখেতের পাশে নিয়ে যাওয়া উচিত। ছোটবেলা থেকেই তাদের বোঝানো উচিত এই দেশটা কীভাবে চলছে, খাদ্য কীভাবে আসছে। দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের অনেক ছেলে-মেয়ে কোনো ফল খাওয়া অবস্থায় এই ফলটা কোথায় পাওয়া যায় জিজ্ঞেস করলে সে বলবে সুপার মার্কেটে পাওয়া যায়। কোথায় উৎপাদন হয়েছে এ বিষয়টিই তার মাথায় নেই।

সর্বশেষ খবর