বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মন্ত্রিসভায় রদবদল হচ্ছে কি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মন্ত্রিসভায় রদবদল হচ্ছে কি

মন্ত্রিসভা রদবদলের আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মন্ত্রিসভা রদবদল হতে পারে। কাকে রাখবেন আর কাকে বাদ দেবেন তা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টির বিষয়টি স্রেফ গুজব ও ভিত্তিহীন বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল বিকালে সেতু ভবনে ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। দলের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যের পর সরকার ও দলের ভিতরে শুরু হয়েছে নানামুখী আলোচনা। দীর্ঘদিন ধরেই মন্ত্রিসভা রদবদলের একটা গুঞ্জন চলছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পরপরই মন্ত্রিসভা রদবদল একটা গুজব ছড়ায়। তবে এখনো তা হয়নি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এখন মন্ত্রিসভা ঢেলে সাজানো হবে কিনা তা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ জানেন না। সব মহলেই এখন প্রশ্ন— মন্ত্রিসভায় রদবদল হচ্ছে কিনা?

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর সেই সরকারের শেষ দিকে অর্থাৎ মাত্র দেড় বছর বাকি থাকতে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ যুক্ত করা হয়। এখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছরেরও কিছু কম সময় বাকি রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদের তিন মাস আগে নির্বাচন হলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে এই অল্প সময়ের মধ্যে মন্ত্রিসভা রদবদল করা হলে কাকে নেওয়া হবে, আর কাকে বাদ দেওয়া হবে তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। বর্তমান মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। কেউ কেউ হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। আবার কেউ কেউ শারীরিক কারণে নিয়মিত অফিসও করতে পারেন না। কোনো কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর  কর্মদক্ষতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী কারও কারও ওপর কিছুটা অসন্তুষ্ট। আবার কারোর কর্মদক্ষতায় তিনি সন্তুষ্ট। কোনো কোনো মন্ত্রীর কার্যক্রমে দলের ভাবমূর্তি বেশ কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসব বিবেচনায় কে বাদ পড়বেন আর কে থাকবেন তা প্রধানমন্ত্রীর ওপরই নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। মন্ত্রিসভার মতো প্রশাসনেরও বিভিন্ন স্তরে ঢেলে সাজানোর কথা শোনা যাচ্ছে। তবে যা কিছু করা হবে সবই আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই হবে বলে সরকার ও দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব বেশি বাকি নেই। ফলে যা কিছুই করা হোক না কেন খুব সতর্কতার সঙ্গেই করতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কিছু কর্মকর্তা খুব ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছিলেন। গত নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন আরও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়। নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের প্রতি আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর ঢেলে সাজাতে হবে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকেও নির্বাচনমুখী অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। মুখে মুখে প্রশাসনের সবাই এখন আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত। কিন্তু সময়মতো এদের পাশে পাওয়া যাবে কিনা, তা মাথায় রেখেই অগ্রসর হতে হবে। এ ক্ষেত্রে দল ও সরকারের প্রতি অঙ্গীকার আছে এমন কর্মকর্তাদের দরকার বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার সদস্যদের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী মূল্যায়ন করছেন। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছেন। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় তিনি একাধিকবার পরিদর্শন করেন। তখন তিনি বেশকিছু নির্দেশনাও দেন। সেসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা বিশ্লেষণ করেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী ছিলেন। এরপর একই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালি থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এ এইচ মাহমুদ আলী আর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে মন্ত্রণালয় বদলিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ২০১৪ সালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সংস্কৃতি কর্মী ও সংরক্ষিত আসনের এমপি তারানা হালিম এবং লালমনিরহাটের এমপি নুরুজ্জামান আহমেদ। এ ছাড়া একই দিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী হন আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হন ইয়াফেস ওসমান। গত বছরের ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। নতুন এলজিআরডি মন্ত্রী করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। এর কয়েক দিন পরই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন মারা যান। বর্তমানে ৩১ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর