বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কমিটিতে ৩৩ ভাগ নারী নিয়ে বিপাকে ইসলামী দলগুলো

গোলাম রাব্বানী

কমিটিতে ৩৩ ভাগ নারী নিয়ে বিপাকে ইসলামী দলগুলো

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দলে ৩৩ ভাগ নারী প্রতিনিধি রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসলামী দলগুলো। এ ছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারলে দলগুলোর নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। ইসি কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল নারী প্রতিনিধিত্ব দিন দিন বাড়ালেও পিছিয়ে আছে ইসলামী দলগুলো। অনেক ইসলামী দলে এক ভাগও নারী নেই। এদিকে আওয়ামী লীগের ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুই দলের পক্ষ থেকে ইসিকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে ১১টি। এদের মধ্যে এমন দলও আছে, যেগুলোর কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। শর্ত পূরণে তাদের হাতে সময় আছে মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ অবস্থায় ইসলামী দলগুলোর নেতারা বলছেন, বাস্তবতা বিবেচনায় তাদের আরও সময় দিতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বের বিকাশের প্রতি তাদের সমর্থন থাকলেও স্বল্প সময়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি ‘চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে তারা মনে করছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলো এখন সেই শর্ত পূরণ নিয়ে বিপাকে রয়েছে। তারা আদৌ এ শর্ত পূরণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এদিকে অনেক দল ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত পূরণের সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৫টি দল ইসিকে তাদের অগ্রগতির বিষয়ে জানিয়েছে। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগে নারী প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে। ইসিকে দেওয়া চিঠি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, তাদের সব স্তরের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী রয়েছেন। জাকের পার্টি জানিয়েছে, তাদের দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিষয়টি গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে তারা কাজ করছে। ২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু অধিকাংশ দল গত ৯ বছরে লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি। এ অবস্থায় ১৩ জুন নিবন্ধিত ৪০টি দলের কাছে ‘নারী প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্তি’র সর্বশেষ তথ্য চেয়ে তাগিদ দেয় ইসি। জবাবে খেলাফত মজলিশ ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। তবে কমিটিতে নারীদের আনার প্রতিশ্রুতি তারা পূরণ করতে চায়। জানা গেছে, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঁচজন নারী রয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নারী প্রতিনিধিত্বের অগ্রগতি জানিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দেবে। ইসলামী ঐক্যজোটও ‘শিগগিরই’ ইসিতে প্রতিবেদন দেবে। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্য থাকলেও তৃণমূলে নেই। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কয়েকজন নারী সদস্য রয়েছেন। তবে তাদের তৃণমূলের কমিটির অনেক পদ খালি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন লক্ষ্য পূরণে ‘অনেক দূর’ এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ২০২০ সালের মধ্যেই শর্ত পূরণ করা যাবে। তবে তাতে হয়তো সব কমিটি ‘মানসম্মত’ হবে না। ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত পূরণের সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে দলটি। বড় দুই দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এখনো ইসিতে প্রতিবেদন জমা দেয়নি। তবে সর্বশেষ কাউন্সিলের আগে বিএনপির কমিটিতে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টিতে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব ছিল।

সর্বশেষ খবর