বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্নীতি মামলা হচ্ছে ক্যান্সারের মতো

দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুদক চায় সরকারি কর্মকর্তারা আইন-কানুন, নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক। তা হলে অভিযোগও উঠবে না, মামলাও হবে না। কারণ, দুর্নীতি মামলা হচ্ছে ‘ক্যান্সারের মতো’, এর কোনো শেষ নেই। দুর্নীতি মামলার কারণে নিজের জীবন, সম্পত্তি, একটি পরিবার, একটি বংশ ধ্বংস হয়ে যায়, পথে বসিয়ে দেয়। ‘দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা, দুর্নীতির অভিযোগের প্রকৃতি’ বিষয়ক মাঠপর্যায়ের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুজ্জামানের সভাপতিত্বে গতকাল সকালে বরিশাল জেলা প্রশাসনের হলরুমে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন, রেঞ্জ ডিআইজি শেখ মারুফ হাসান, দুদকের বিভাগীয় পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান, সড়ক ও জনপথ বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রমজান আলী এবং জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি দফতরের বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন। দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, দুদকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাই। দুদকের লোকজন ঘুষ খেয়ে অন্যায়ভাবে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়, ভয় দেখায়, দুর্ব্যবহার করে, ডেকে নিয়ে অহেতুক ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক মনে করছে, কোনো কোনো জেলায় দুদকের অফিস বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ সেসব জেলায় কোনো অভিযোগ আসে না। দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো কাজও নেই। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দুদক কাজ করতে চায় উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে। দুদক দুর্নীতি দমনের চেয়ে প্রতিরোধে বেশি মনোযোগী হতে চায়।

সারা দিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকলে হবে! : বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দেখে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসককে বললেন, সারা দিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকলে হবে! তুমি কাজটা কর কী? শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে যদি খেয়াল না-ই দাও, তাহলে নতুন প্রজন্ম কী শিখবে? তুমি এগুলো দেখ না কেন, এগুলো তোমার কাজ। তোমার ইউএনও কোথায়?

দুদক চেয়ারম্যান গতকাল ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। তার সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং অন্যান্য কর্মকর্তা। ‘ইউএনও কোথায়?’ প্রশ্ন শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন ইউএনও হুমায়ুন কবির। তাকে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, টেস্টে ফেল করা ছাত্ররা কী করে এসএসসি পরীক্ষার্থী হলো? ইউএনও আমতা আমতা করে বলেন, স্যার আমি প্রাইমারি...। তখন দুদক চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি কে? ইউএনও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান। তখন দুদক চেয়ারম্যান বললেন, তাকে শোকজ কর না কেন! তুমি কী নিয়ে ব্যস্ত থাক?

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের ভর্ত্সনার আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ওই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে জানতে চান এবার এসএসসিতে কজন পরীক্ষার্থী ছিল? এক শিক্ষক জানান, ১০৪ জন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি জানি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এদের অর্ধেকেরও বেশি ছাত্রকে ফেল করা সত্ত্বেও এসএসসি পরীক্ষার্থী করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বীথিকা সরকার জানান, দুদক চেয়ারম্যান যাওয়ার কারণে হোগলা স্কুলে বহু মানুষের ভিড় জমে যায়। দুদক চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য নিয়ে ক্ষুব্ধ হন, তখন তিনি (বীথিকা) দূরে ছিলেন।

জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো সাইফুজ্জামান বলেন, ফেল করা শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দেওয়া হলে তারা সম্পদ না হয়ে দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ফেল করা শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দেওয়ায় দুদক চেয়ারম্যান তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হননি, তাদের (কর্মকর্তা) অনুশাসন করেছেন মাত্র।

সর্বশেষ খবর