শিরোনাম
বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

গৃহকর্মী নির্যাতনে গৃহকর্ত্রী নদীর যাবজ্জীবন

আদালত প্রতিবেদক

শিশু গৃহকর্মী আদুরী নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আসামিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার দ্বিতীয় আসামি ইশরাত জাহানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিচারক।

গতকাল ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে আদালতের কাঠগড়ায় কিছুটা চিন্তাযুক্ত ছিলেন খালাস পাওয়া আসামি ইশরাত জাহান। কিন্তু তার মেয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত নদী ছিলেন পুরোপুরি স্বাভাবিক। তার পরনে ছিল সাদা সালোয়ার-কামিজ। মুখে ছিল মুচকি হাসি। হাতের নখে ছিল পলিশ, পায়ের আঙ্গুলে মেহেদির রং এবং চোখের ভ্রু প্লাক করা। রায় শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা নদী উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে চিত্কার করে বলতে থাকেন, ‘আমাকে বাইরে নিয়ে চল। আমি পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করব।’ পরে নদীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আদুরীর মা সাফিয়া বেগম বলেন, ‘বিচারে আমরা খুশি। হুনছি (শুনেছি) গরিবে বিচার পায় না। আমরা ঠিক বিচার পাইছি। এখনো আমার মেয়ে ব্যথায় প্রতি রাতে ডাকচিত্কার করে। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। অভাবের কারণে আদুরীর চিকিৎসা ও লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি না। আদুরী বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।’ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহমুদা আক্তার বলেন, রায় ঘোষণার আগে আসামি নদীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় এবং জামিনে থাকা আরেক আসামি নদীর মা ইশরাত জাহান রায়ের জন্য আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত নদীকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া রায়ের আদেশে আসামি নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই অর্থ আদায়ের পর তা নির্যাতিত কিশোরীকে দিতে হবে। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে নদীকে। আদুরী ও তার মাসহ অন্য আত্মীয়স্বজনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায়বিচার হয়নি; রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে আপিল করব।’ মামলাসূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১ সুলতানা প্যালেসের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা নওরীন জাহান নদী শিশু গৃহকর্মী আদুরীকে ধারালো চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে, ইস্তিরি দিয়ে ছেঁকা দিয়ে মারাত্মক জখম করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে মৃত ভেবে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি ডাস্টবিনে ফেলে রেখে যান আসামি নদী ও তার মা ইশরাত জাহান। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন আদুরীর মামা নুরুল চৌধুরী। মামলায় আসামি করা হয় গৃহকর্ত্রী নদী, তার মা ইশরাত জাহান, স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ এবং তাদের আত্মীয় সৈয়দ চুন্নু মীর ও মো. রনিকে। পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠির কৌরাখালী গ্রামের মৃত খালেক মৃধার মেয়ে আদুরী সাংবাদিকদের বলে, ‘আগের সেই নির্যাতনের স্মৃতি এখনো দুঃস্বপ্ন হয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। শরীরে যেসব জায়গায় নির্যাতন করা হয়েছিল, এখনো মাঝেমধ্যে সেসব জায়গায় ব্যথা হয়, চুলকায়।’ বর্তমানে আদুরী পরিবারের সঙ্গেই থাকে।

সর্বশেষ খবর