বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝুঁকি কমেনি শাহজালালে

পর্যবেক্ষণে আসছে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল, অসন্তোষ মন্ত্রীর

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ঝুঁকি কমেনি শাহজালালে

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ঝুঁকি এখনো রয়েই গেছে। মালামাল নেওয়ার জন্য আমদানি কার্গো এলাকার গেট ও ভিতরে বিশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে থাকে কাভার্ড ভ্যান। রানওয়ের পাশে এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট (জিএসই), যার অনেকগুলো কোনো কাজেই লাগছে না। ময়লা নিষ্কাশনের জন্য ডাস্টবিন রাখা হলেও এয়ারলাইনসগুলো টারমার্কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। বৃষ্টির পানিতে সেই ময়লা আবার রানওয়েতে চলে আসছে, যা বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া আমদানি কার্গো এলাকা থেকে বিভিন্ন এজেন্সির লোকজন নির্বিঘ্নে এয়ার সাইডে যাতায়াত করছেন। দেশের প্রধান এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনাগত ঝুঁকি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। সম্প্রতি বিমানবন্দরের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘গোডাউনের বাইরে স্তূপ অবস্থায় আমদানি কার্গো পড়ে আছে। এগুলো উন্মুক্ত স্থান থেকে ওয়্যার হাউসে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিমানবন্দরের ভিতরে জিএসই ইকুইপমেন্ট যথাযথ ব্যবস্থাপনারও নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখনো পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।’ বিমানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত ১ জুলাই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি এর কার্যবিবরণী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিমানবন্দর পরিদর্শনে আগামী মাসে যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের (ডিএফটি) একটি প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। সেই সফরকে সামনে রেখেই এই বৈঠক হয়। কারণ ব্রিটিশ ওই প্রতিনিধি দলটির পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি। মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানায়, প্রতিনিধি দলটির ঢাকা সফরের আগেই বিমানবন্দরের ঝুঁকি নিরসনের নির্দেশনা দিয়েছেন বিমানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে সভায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর সদস্যকে (অপারেশন) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিমান, কাস্টম হাউস, এপিবিএনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করতে। এ বিষয়ে জানতে বেবিচকের সদস্য (অপারেশন) এয়ার কমোডর এম মোস্তাফিজুর রহমান জিইউপি, এনডিসি, পিএসসির অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিরাপত্তা ঘাটতির কারণ দেখিয়ে গত বছর মার্চে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য। এরপর একইভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয় জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া। পরে যুক্তরাজ্যের পরামর্শ মেনে তাদের প্রতিষ্ঠান রেডলাইন এসিউরড সিকিউরিটিকে দুই বছরের জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয় সরকার। প্রথম দফায় গত নভেম্বরে বিমানবন্দর পর্যবেক্ষণ করে যায় যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দল। এখন আগামী মাসে আবার ওই প্রতিনিধি দলটির ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণীর তথ্যানুযায়ী, বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গণি চৌধুরী জিইউপি, এনডিসি, পিএসসি বৈঠকে বলেন, ‘আমদানি কার্গো এলাকার বাইরে এয়ার সাইডে বিভিন্ন এজেন্সির জনবলের গমনাগমন বিমানবন্দরে নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আগস্টে যুক্তরাজ্যের ডিএফটি (ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট)-এর প্রতিনিধি দলের বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে। তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। কাজেই অননুমোদিত প্রবেশ এখনই বন্ধ করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানি কার্গোতে ৭০০ থেকে ৮০০ জনবল কর্মরত। বিমানবন্দরের ভিতরে বাইরের সংস্থার জনবল না রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিল ডিএফটি। ফলে এ বছর আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। আমদানি কার্গোতে মালামাল চিহ্নিতকরণের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের এয়ার সাইড এলাকা পর্যন্ত যাওয়াও বন্ধ করতে হবে।’ বেবিচকের সদস্য (অপারেশন) এয়ার কমোডর এম মোস্তাফিজুর রহমান বৈঠকে বলেন, ‘আমদানি কার্গো ডেলিভারির ২ নম্বর গেট এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের জটের বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিরসন হয়নি। মালামাল সম্পূর্ণভাবে না পাওয়া পর্যন্ত আমদানি কার্গো গেটে কাভার্ড ভ্যানগুলো দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে। এ জন্য গাড়ির জট লেগেই থাকে। মালামাল সম্পূর্ণরূপে সংগ্রহের পর কাভার্ড ভ্যানগুলো যেন গেটের ভিতরে প্রবেশ করে সে বিষয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।’

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিম বৈঠকে বলেন, ‘টারমার্কের পশ্চিম দিকে ক্যানেলের পাশে ২০-২৫টি বিন থাকা সত্ত্বেও এয়ারলাইনসগুলো ক্যানেলের মধ্যে ও পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখে। এতে বৃষ্টির পানিতে ময়লাগুলো রানওয়েতে চলে আসে। এ পরিস্থিতি নিরসনে বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অভিযুক্ত এয়ারলাইনসকে জরিমানা করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরের ভিতরে পরিদর্শক/পর্যবেক্ষক অনেক সময় পরিচিতিপত্র প্রদর্শন করতে বললে অনেকে তা দেখাতে অনীহা প্রকাশ করেন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর