বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সহসাই খুলছে না কনটেইনার জট, লাগবে ছয় মাস

চট্টগ্রাম বন্দর

রুহুল আমিন রাসেল

দেশের অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দর এখন কার্যত অচল। ভয়াবহ কনটেইনার জটে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ জট শিগগিরই খুলছে না। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কনটেইনার জট খুলতে তিন থেকে ছয় মাস লাগবে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘এত সময় দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয় না। দ্রুত সমাধান চাই।’ জানা গেছে, সংকট উত্তরণে আজ বা আগামীকাল অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংকট উত্তরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছু পরামর্শ ইতিমধ্যে দিয়েছি। আমরা বলেছি, কনটেইনার জট দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখা যাবে না। অতি দ্রুত সমাধান করতে হবে। তিন থেকে ছয় মাস যদি জট খুলতে লাগে, তাতে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এটা মানা যায় না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, দু-এক দিনের মধ্যেই অর্থমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। এখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তারও একটি বিষয় আছে। সেটি যাতে দ্রুত হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।’ এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘এখন বন্দরে যেভাবে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে, তাতে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এভাবে কোনো দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেন না। এর পরও প্রতি কনটেইনারে অতিরিক্ত সারচার্জ আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু সঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না। এ কারণে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।’ জানা গেছে, এবারের ঈদের ছুটি, ব্যাপক হারে পণ্য আমদানি এবং লাগাতার প্রাকৃতিক দুর্যোগে জাহাজ ও কনটেইনার জটে নাকাল অবস্থায় পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরে জেটি ও বহির্নোঙরে শতাধিক জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে। জটের কারণে বন্দরে কনটেইনার খালাসের জায়গা নেই বললেই চলে। বন্দরে অতিরিক্ত অবস্থানের কারণে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারীদের খরচ বাড়ছে। কনটেইনারে নির্ধারিত সময়ের বেশি পণ্য রাখার জন্য আমদানিকারকদের বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা দিতে হচ্ছে। আমদানি করা কাঁচামাল বিলম্বে পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানাসমূহ। জানা গেছে, ৩৬ হাজার ৩৫৭টি কনটেইনার ধারণক্ষমতার এই বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে বর্তমানে কনটেইনার ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী যন্ত্রপাতি চলাচলের জন্য ধারণক্ষমতার অন্তত ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়। কিন্তু তা মানা সম্ভব হচ্ছে না কনটেইনারের মাত্রাতিরিক্ত চাপ থাকার কারণে। আবার জাহাজ-জটের কারণে মালামাল খালাস বিলম্বিত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জটে অচলাবস্থা মোকাবিলায় মঙ্গলবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করা হয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সভায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন। এ বৈঠকে জট নিয়ে ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে জাহাজ-জট, পণ্য খালাসে দিনের পর দিন অপেক্ষা এবং কনটেইনার জটের সমস্যা তুলে ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে জানানো হয়, বন্দরে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও জাহাজ বার্দিং (বন্দরে ভিড়তে) করতে পারছে না। দুটি গ্যাংট্রি ক্রেন নষ্ট থাকায় বাকি দুটিতে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। বন্দর কাস্টমস, ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাহাজ ও কনটেইনার জট সমস্যা সমাধানে তিন থেকে ছয় মাস সময় চান। তবে ব্যবসায়ীরা এত দীর্ঘ সময় দিতে আপত্তি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। দেরি হলে ব্যবসা চলে যাবে অন্য দেশে।

সর্বশেষ খবর