শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসির সামনে যত চ্যালেঞ্জ

রোডম্যাপ অনুযায়ী সামনে চলা, সংলাপ বাস্তবায়ন, সীমানা নির্ধারণ, প্রশ্নহীন ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ

গোলাম রাব্বানী

ইসির সামনে যত চ্যালেঞ্জ

নির্বাচন কমিশনের সামনে আসছে কঠিন সময়। পদে পদে নানা পরীক্ষা দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানকে। এ ক্ষেত্রে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী সামনে চলা, রাজনৈতিক দলসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ বাস্তবায়ন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, প্রশ্নহীনভাবে ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইসি তার প্রথম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথে অগ্রসর হচ্ছে।

এদিকে বর্তমান কমিশনও এ বিষয়গুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। তারা বলছে, সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ে সংসদ নির্বাচন করতে দৃঢ়তার সঙ্গে ও সুচিন্তিত পন্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। দেশবাসী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। সার্বিকভাবে দেশে জাতীয় নির্বাচনের একটি অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ইসি কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে স্টেকহোল্ডার, গণমাধ্যম, দলসহ সংশ্লিষ্টদের সামনে উপস্থাপন করে সবার মতামত নেবে। সবার মতামতের আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব বলে ইসি বিশ্বাস করে। এ ক্ষেত্রে সবার মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে অন্যতম সাতটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ছয় সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে আগামী বছরে তিন ধাপে এ ছয় সিটিতে নির্বাচন করার চিন্তা করা হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে রংপুর সিটি নির্বাচন। এরপর গাজীপুর সিটি নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। এর পরে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটির নির্বাচন করা কথা ভাবা হচ্ছে। আর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এসব সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের চেষ্টা করবে ইসি। এ ছাড়া ৩১ জুলাই শুরু হতে যাওয়া সংলাপের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে কমিশন। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে যাতে কোনো ধরনের ঝামেলা না হয়। এ ছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যাতে কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব না হয় সেদিকে বিশেষ নজরও দিচ্ছে বর্তমান ইসি। এজন্য একটি বিশেষ কমিটিও করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের আস্থা তৈরি করতে আইন সংস্কারসহ নানা উদ্যোগও নিচ্ছে কমিশন।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এ কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিতে চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে আলাদা চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নানা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তিনি বলেছেন, ‘আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা বর্তমান কমিশনের জন্য অনেকটাই চ্যালেঞ্জ।’ এ ছাড়া ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও মনে করছেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করছি। এ রোডম্যাপ কত নিরপেক্ষতার সঙ্গে, সততার সঙ্গে, দৃঢ়তার সঙ্গে তারা বাস্তবায়ন করছেন, তা সবাই দেখছেন। রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করছি।’ তিনি বলেন, ‘রোডম্যাপই নির্বাচনে “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” তৈরি করার মূল ভিত্তি। নিরপেক্ষতার সঙ্গে, একনিষ্ঠতার সঙ্গে তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে যাবে নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনকালীন সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাদের হাতে থাকবে। ওই চ্যালেঞ্জ নিরপেক্ষ ও একনিষ্ঠভাবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে।’ মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন কখন কী করবে তার একটি নকশা ঘোষণা করেছে। এটা রুটিনওয়ার্ক হলেও অনেক চ্যালেঞ্জের। একইভাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেকেই প্রভাবিত করে নিজেদের মতো করে সীমানা নির্ধারণ করতে চান। আরেকজন চান এক সীমানা আরেক সীমানার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে। যার যার সুবিধামতো সীমানা চান। এও একটা চ্যালেঞ্জ। এও যত্নের সঙ্গে, সতর্কতার সঙ্গে, নিরপেক্ষভাবে করতে হবে।’ সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সহায়ক সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক। আর একে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে।’ এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’ এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি নির্বাচনের জন্য বড় প্রয়োজন। একটি দল আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। আবার অন্যরা কিছু করতে পারছে না। কিন্তু সেই বিষয়ে কমিশন বলছে, তাদের কিছু করার নেই। তাই ইসিকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না।’ তিনি বলেন, ‘সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য ব্যাপক জনসংলাপ প্রয়োজন; যাতে সীমানা সংশোধনের মাধ্যমে কেউ নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারে।’ একেও তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন। সফল সংলাপ ও গঠনমূলক সমালোচনা : এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, ‘রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হবে, সমালোচনা হবে। সমালোচনা হলে তো চ্যালেঞ্জ। আমি মনে করি, আমরা সবার সঙ্গে সফল সংলাপ করতে পারব। আলোচনাগুলো সবই সফল হবে। আমরা অবশ্যই সবার জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরি করতে পারব। যেখানে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। এটা কমিশনের সাকসেস, এজন্য কমিশন এগিয়ে যাচ্ছে।’ গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘সমালোচনা, গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই আমরা গ্রহণ করব, তাকে কমিশন স্বাগত জানাবে। সমালোচনা যদি সমালোচনার জন্য হয় তা নিশ্চয়ই আমরা সেভাবে দেখব।’

নির্বাচন কমিশনের সচিব বদলি ভারপ্রাপ্ত সচিব হলেন ৩ কর্মকর্তা : নির্বাচন কমিশনের সচিবকে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত তিন সচিবকে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পৃথক আদেশ জারি করে এই বদলি এবং নিয়োগের বিষয়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে জানানো হয়েছে, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদকে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদায় নির্বাচন কমিশনের সচিব নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে শিল্পসচিব পদে বদলি করা হয়েছে।

অপর আদেশে জানানো হয়, জননিরাপত্তা বিভাগে সংযুক্ত ওএসডি অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল হান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদায় ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ নমিতা হালদারকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর