শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

শাহবাগে পুলিশ শিক্ষার্থী সংঘর্ষ ১৫ জন আহত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

শাহবাগে পুলিশ শিক্ষার্থী সংঘর্ষ ১৫ জন আহত

শাহবাগে গতকাল আন্দোলনরত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল শাহবাগ এলাকায় এ সংঘর্ষের সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আটক হয়েছেন ১৩ জন।

জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল ইসলাম কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও মিরপুর বাঙ্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরে যেতে বলে। এ সময় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলে যায়। তখন পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। এ সময় সংঘর্ষ বেধে যায় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে শাহবাগের আশপাশে অবস্থান নিয়ে পুলিশের ওপর ইট নিক্ষেপ করেন। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও পরে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পুলিশের লাঠিপেটায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সরকারি তিতুমীর কলেজের সাব্বির হোসাইন জানান, আহতদের মধ্যে সিদ্দিকুর রহমানের অবস্থা গুরুতর। তার চোখে আঘাত লেগেছে, তিনি এখন কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। সিদ্দিকুরকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে শেরেবাংলা চক্ষু ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এর পর সিদ্দিকুরকে চক্ষু ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। সিদ্দিকুর তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা মানববন্ধন শেষ করে যাওয়ার সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও ১৩ জনকে আটক করে। প্রসঙ্গত, অধিভুক্ত কলেজগুলো নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রকাশ, সম্মান দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভাইভা/ব্যবহারিক পরীক্ষা শিগগির শেষ করে দ্রুত ফল প্রকাশসহ বেশ কিছু দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে আমরা অস্তিত্বহীনতায় ভুগছি। আমাদের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য নেই। আগে আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য পেতাম। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাচ্ছি না। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তো থাকার প্রশ্নই আসে না।’ তবে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার তারিখ অধিভুক্ত কলেজগুলোর নোটিসবোর্ডে টানানো হয়েছে। এদিকে আন্দোলনের মুখে অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরীক্ষার তারিখ লিখিতভাবে ঘোষণা করলেও পূর্ণাঙ্গ রুটিন প্রকাশ করেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রুটিন প্রকাশ করতে সপ্তাহখানেক লাগবে। কোন কলেজে কখন পরীক্ষা হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি। আর ফল প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের উপস্থিতিতে কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সভায় এসব কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার তারিখ ঠিক করা হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মৌখিকভাবে জানালেও লিখিতভাবে কিছু জানানো হয়নি। ঘোষিত পরীক্ষার তারিখগুলো হলো মাস্টার্স শেষ পর্বের শুরু হবে ১০ সেপ্টেম্বর, অনার্স তৃতীয় বর্ষের ১৬ অক্টোবর, ডিগ্রি প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের ৪ নভেম্বর।

সর্বশেষ খবর