শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
সম্পাদক পরিষদের সভা

সংবিধান পরিপন্থী ও স্বাধীন মতপ্রকাশের হুমকি ৫৭ ধারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে অন্য কোনো আইনে এ ধারাগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করার দাবি জানানো হয়। গতকাল রাজধানীর দি ডেইলি স্টার কার্যালয়ে পরিষদের এক সাধারণ সভায় এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। এ সময় পরিষদের সদস্য মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান চৌধুরী, তাসমিমা হোসেন, নঈম নিজাম, ইমদাদুল হক মিলন, শ্যামল দত্ত, খন্দকার মনিরুজ্জামান, সাইফুল আলম, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সভায় বলা হয়, এ আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সব বিষয় বিদ্যমান থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ, এ ধারাতেও তথাকথিত মানহানি, সামাজিকভাবে অপদস্ত করার চেষ্টা বিশেষভাবে রাখা হয়েছে। যদিও আইনমন্ত্রী কিছু দিন আগে বলেছিলেন, ৫৭ ধারাটি থাকছে না। কিন্তু প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৯ ধারাতে আরও শক্তভাবে তা রাখা হচ্ছে। আমরা এটা ভেবে উদ্বিগ্ন যে, প্রস্তাবিত খসড়ার ১৫ এর ৫ ধারা চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আরেকটি বড় বাধা হবে। কারণ, এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কোনো বক্তব্য সরকারি ভাষ্যের বিপরীত হলে তা ‘ডিজিটাল সন্ত্রাসী অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক বিধান পর্যালোচনা ও সংশোধন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। সম্পাদক পরিষদ অনলাইন গণমাধ্যমবিষয়ক নীতিমালার খসড়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেন, এতেও ৫৭ ধারাসহ তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ খসড়া নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ এতেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায় হয়, এমন সব বিধিবিধান বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানির অভিযোগকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেওয়ার বিধানও বাদ দেওয়ার জন্য দাবি জানায় সম্পাদক পরিষদ। তারা বলেন, এ ধরনের বিষয়ের প্রতিবিধানের জন্য সবার আগে প্রেস কাউন্সিলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানাই। দেওয়ানি অভিযোগের ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ দাবির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সরকারের কোনো নীতিমালা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম তাদের সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল মিডিয়া তথা ওয়েবসাইট, অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে কোনো রকম হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন প্রচলিত গণমাধ্যমের নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন। সম্পাদক পরিষদ সাংবাদিকদের ওপর সব হামলার নিন্দা জানিয়ে এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারা দেশে যত মিথ্যা মামলা করেছেন তা প্রত্যাহারের দাবি জানায় সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় যত মামলা আছে তা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃত সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানায় পরিষদ। সভায় সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলা হয়, আইসিটি আইন থেকে ৫৭ ধারা প্রত্যাহার ও অন্য কোনো আইনে এ ধারাগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ থেকে বিরত থাকুন। এ আইনের ধারাগুলো সংবিধান পরিপন্থী এবং স্বাধীন মত প্রকাশ ও সাংবাদিকদের প্রতি হুমকি।

সর্বশেষ খবর