শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

২০১৬ সালে জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে বাংলাদেশে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী ২০১৬ সালে জঙ্গি তৎপরতা কমলেও বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে এই সময়ে সরকার এ ধরনের তৎপরতা দমনে কঠোর ভূমিকাও নিয়েছে। গত বছরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে তৈরি করা মার্কিন বার্ষিক সন্ত্রাসবাদ প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে। বুধবার প্রকাশিত ওই ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেররিজম ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনে আন্তর্জাতিক পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করছে। তবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দূর না হওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার যথেষ্ট প্রশংসা করা হলেও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের একাধিক অপারেশন নিয়ে জনমনে সন্দেহের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এই প্রতিবেদনে। সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বন্ধে সন্দেহজনক লেনদেন আটকানোসহ ব্যাংকিং ও অন্যান্য খাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। প্রতি বছরের মতো বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের বিষয়ে আলাদা মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে আইএস ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বিদেশি, পুলিশ, সেক্যুলার ব্লগার ও প্রকাশকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। জঙ্গিরা নিজেদের কর্মকাণ্ড ও বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমকে বেছে নেয়। আইএস ও আল-কায়েদার কিছু প্রকাশনা, ওয়েবসাইট ও ভিডিওতে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে কয়েকবার। গত বছর আইএস বাংলাদেশে ১৮টি সন্ত্রাসী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা, যেখানে পাঁচ জঙ্গির হাতে নিহত হন ২০ জন জিম্মি ও দুই পুলিশ সদস্য। গত বছর বাংলাদেশে চালানো সন্ত্রাসী হামলাগুলোর মধ্যে দুটির দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদা ইন দি ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস)। এর প্রথমটি ছিল একজন বাংলাদেশি অনলাইন অ্যাকটিভিস্টকে হত্যা এবং অন্যটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একজন স্থানীয় কর্মকর্তা ও তার বন্ধুকে হত্যা। উভয় ক্ষেত্রেই ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ছোট ছোট হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেগুলোর দায় কোনো সংগঠন নেয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে বোমা বিস্ফোরণ, যেখানে চারজন নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বেশির ভাগ সময়ে উগ্র সহিংসতাকে রাজনৈতিক বিরোধী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু সরকার সন্ত্রাস দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং প্রচুর সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় সামরিক বাহিনীকে ব্যবহারের আদেশ দিয়েছিলেন; যেটি প্রমাণ করে প্রয়োজন হলে তিনি সামরিক শক্তি প্রয়োগেও পিছপা হবেন না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গেও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবচেয়ে উদ্বেগ ছিল। এ কারণে গত বছর যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো পাঠানো নিষিদ্ধ করে। বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করলেও সন্ত্রাসীদের জন্য কোনো ওয়াচলিস্ট নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো অ্যাডভান্সড পেসেঞ্জার ইনফরমেশন সিস্টেমও নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সীমান্ত, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরকে আরও নিরাপদ করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, বিদেশি সন্ত্রাসীদের ধরতে প্রয়োজনীয় আইন না থাকলেও বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদে জড়িত সন্দেহে কয়েকজন বিদেশি সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে।

 গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বাংলাদেশ পুলিশের নতুন গঠিত কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও র‌্যাব অনেক অভিযান চালায়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এর কয়েকটি অভিযান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ করে র‌্যাবের সাজানো অভিযান ছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।’ বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা ২০১৬ সালে কমে আসার কারণ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এ সময়ে আফগানিস্তান, সিরিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং ইয়েমেনে তুলনামূলক কম হামলা ও প্রাণহানির কারণে বিশ্বে সন্ত্রাসবাদী হামলা কমে এসেছে। তবে একই সময়ে ইরাক, সোমালিয়া, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসী হামলা ও হতাহতের ঘটনা বেড়েছে। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে ইরান, সিরিয়া ও সুদানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে বেশির ভাগ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অন্য যে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে আইএস। গত বছর বিশ্বের ১০৪টি দেশে সন্ত্রাসী হামলা হলেও জঙ্গিগোষ্ঠীটি গত কয়েক বছরে যেসব স্থানে হামলা চালিয়েছিল সেসব ভৌগোলিক এলাকার প্রতিই বেশি মনোযোগী ছিল। বিশ্বজুড়ে মোট হামলার ৫৫ শতাংশ হয়েছে ইরাক, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপিন্সে। আর সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের ৭৫ শতাংশ মারা গেছে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানে।

সর্বশেষ খবর