রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিব্রত সরকারি দল সাভারের এমপি এনামকে নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিব্রত সরকারি দল সাভারের এমপি এনামকে নিয়ে

‘পাঁচজনকে ক্রসফায়ার দিয়েছি, আরও ১৪ জনের লিস্ট করেছি’— ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ডা. এনামুর রহমানের এমন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় বইছে দেশ-বিদেশে। সমালোচনায় মুখর খোদ সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও। দলের হাইকমান্ড থেকেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। শুধু বক্তব্যই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ আরও অন্তত ১২টি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্ষমা চাওয়ায় দেশ-বিদেশে এ নিয়ে আরও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ধরনের রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্যের কারণে যে কোনো সময় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে দলে দলীয় সূত্র জানায়। এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, শুধু বক্তব্যেই নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনে নানা নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়েও সাভারে রয়েছে রসাত্মক সমালোচনা।

সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে আতঙ্কে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সাভারের সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন— রানা প্লাজার ঘটনায় ‘মানবিকতার’ পরিচয় দিয়ে পুরস্কারস্বরূপ আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি বনে যাওয়া ডা. এনামুরের পরবর্তী টার্গেট কে? একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তার এ বক্তব্যে বিব্রত দলের হাইকমান্ড। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা বলছেন, অরাজনৈতিক ব্যক্তি ‘মানবিকতার’ পরিচয় দিয়ে এমপি হয়ে হঠাৎ কেন অমানবিক হয়ে উঠলেন? নাকি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি অস্বাভাবিক ছিলেন? ঘটনা যাই হোক না কেন, একজন এমপির এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দলীয় সূত্র জানায়, গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে কয়েকজন শীর্ষ নেতা সাভারের দলীয় এমপির বক্তব্যটি প্রসঙ্গক্রমে আলোচনা করেন। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময়ই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু ‘পাঁচজনকে ক্রসফায়ার দিয়েছি, আরও ১৪ জনের লিস্ট করেছি’ এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে দলকে বিব্রত করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে সরকারি দলের এমপি এনামুর রহমান নির্বাচনী এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, ‘সাভারে অনেক ক্যাডার আর মস্তান ছিল। এখন সব পানি হয়ে গেছে। কারও টুঁশব্দ করার সাহস নেই। পাঁচজনকে ক্রসফায়ারে দিয়েছি আরও ১৪ জনের লিস্ট করেছি। সব ঠাণ্ডা। লিস্ট করার পর যে দু-এক জন ছিল, তারা আমার পা ধরে বলেছে, আমাকে জানে মাইরেন না আমরা ভালো হয়ে যাব।’ পরদিন এমপি বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য ১২টি দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রচার দেন। নিজের ফেসবুকেও বক্তব্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এ ঘটনায় তাকে নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এ ছাড়া তার একাধিক বিয়েসহ ব্যক্তিজীবন নিয়েও নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘অরাজনৈতিক ব্যক্তি যখন এমপি হন, তখন কখন, কোথায় কী কথা বলতে হবে, তা না জেনেই মন্তব্য করেন। একজন সংসদ সদস্য হয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এমপি হিসেবে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তার এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিরোধী দলের হাতে ইস্যু তুলে দেওয়া হয়েছে।’ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একজন এমপি হিসেবে তার বক্তব্য নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। তার বক্তব্যের জন্য দল বিব্রত। দলীয় ফোরামে এ নিয়ে কথা হবে। দলীয় ফোরামে কথা বলে বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর